আমার কবিতা ও যৌনতারা | শুভশ্রী পালের গদ্য | আঙ্গিক


যৌনতা এবং কবিতা এই দুটো বিষয়েরই কোনও ধরা বাঁধা এবং মনঃপূত সংজ্ঞা আমাকে কেউ দিতে পারেনি এখনও অবধি৷ যে বিষয়ে জানতে না পারার খুঁতখুতানি থেকে যায় মানুষ সেটাই খুঁজে বেড়ায়, তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই তাই।

আমিও খুঁজি। খুঁজতে গিয়ে দেখি, গ্রীষ্মের দুপুরে যখন সবাই হাঁসফাঁস। আমি তখন কলতলায় গাছের আড়াল তুলে টিউবওয়েলের জল মাথায় ঢেলেই যাচ্ছি। সেই রূপকথার গল্পের মতো। যা শুরু করেছি তা থামানো আর আমার হাতে নেই। জল মাখতে মাখতে আমার সমাজ সচেতন কনশাস মাইন্ড এদিক ওদিক তাকায়। কোনও বাড়ি থেকে দেখা যাচ্ছে না তো! যতদূরে চোখ যায়, কলাগাছের আড়াল, একদিকে আমগাছ ঝুঁকে পড়েছে, যেন টিউশন ব্যাচে সবথেকে মিষ্টি মেয়েটার মুখের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়া ঢেউ খেলানো চুলের গোছা,  উপরে নারকেল গাছ দারোয়ানের মতো দাঁড়িয়ে... দেখি, ঘুঘু ডাকছে একমনে। কাঠবিড়ালিটা আমগাছ বেয়ে নিচের দিকে ডালে বসে অবাক হয়ে আমাকে দেখছে আর চিড়িক চিড়িক করে ডাকছে। কলের মাথার কাছে প্রজাপতি উড়ছে। ওদের দ্বিপ্রাহরিক যাপনে আমি কি তবে এক আস্ত উপদ্রব হয়ে এলাম? তারপর বুঝি আমার থাকা না থাকা ওদের কাছে খুব একটা সমস্যাজনক নয়। তাছাড়া আমাদের ছন্দবোধ বেশ খানিক মিলে গেছে নির্বাক যাপনে পাশাপাশি বসে থাকার দরুণ। আমার কবিতা লেখা হয় না। কারণ জলজ্যান্ত কবিতার মাঝে দাঁড়িয়ে কবিতাকে শরীর দিতে চাওয়ার দুঃসাহস আমার নেই।

দূরে শেষ স্তবকের শেষ লাইনে... আমার পাড়াতুতো আহ্লাদি কুকুর মাথাটা ইষৎ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আমার কাজ সারতে আর কত দেরি! তারপর ও সিঁড়ির তলায় শুতে যাবে। আমি গামছা হাতে, তড়িঘড়ি যতি-চিহ্ন টানি শেষ লাইনে।

শুনেছি যৌনতা বিষয়টা নাকি উপভোগ করার মতো। অদ্ভুত সুখ আছে। আমি কখনও সেসব টের পাইনি। আমার কাছে যৌনতা মানে একটা ঘোর। সঙ্গমের পর ক্লান্ত হয়ে যখন পাশের জীবন্ত অবলম্বনে মাথা এলিয়ে শুয়ে থাকা যায়... আধখোলা চোখে তখন যে সুখের ঘোর থাকে, যেখান থেকে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাওয়া যায় নিশ্চিন্তির ঘুমে, সেটাই আমার কাছে যৌনসুখ।

যেদিন মন খুব অস্থির হয়। আমি অনেকক্ষণ শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে থাকি চুপচাপ। স্থিতধী অভিভাবকের মতো জল এসে হাত বুলিয়ে দেয় ব্রহ্মস্থানে। আমি খানিক শান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি... জল তখন প্রেমিক হয়ে নেমে আসে চিবুক, কাঁধ বেয়ে। সযত্নে দূর করে পায়ের ক্লান্তি। আমার মনে-চোখে ঘোর নেমে আসে। আমি অবলম্বন খুঁজতে থাকি ঘুমানোর জন্য... 

যৌনতার মূল উদ্দেশ্য শুনেছিলাম সৃষ্টি। দুপুরের খাওয়া হয়ে গেলে যখন সারা বাড়ি নিঃঝুম। আমার কুকুরেরা ভাতঘুম দিচ্ছে, কোকিলটাও আর সঙ্গী খোঁজার জন্য উৎসাহী নয়। ডাকপাখি হেঁটে বেরাচ্ছে, আর পায়রা  খুঁটে নিচ্ছে গম। তখন আমি খালি পায়ে বাগানে যাই৷ অপরাজিতা আর কাঞ্চন গাছের বীজ ছড়াই ইতিউতি। দেখি, কদিন আগে ছড়ানো নীলকণ্ঠ গাছের দানার খোসাকে মুকুটের মতো মাথায় রেখে বেরিয়ে আসছে নতুন সবুজ। কাঞ্চন গাছের বীজ থেকে গাছ হতে বড়ো সময় লাগে। দীর্ঘ প্রত্যাশার পরে দেখি দু-হাত বাড়িয়ে ডাকছে কচি একটা প্রাণ।

দোপাটি গাছেরা বড়ো হয়ে জানান দিচ্ছে তাদের এবার একটু স্পেস প্রয়োজন। সন্তান বড়ো হলে দেখে আশ্বস্ত হই সন্তান স্বাবলম্বী হয়েছে। আমাকে পূর্ণতা দেয় সৃষ্টির এই যাপন...

মন্তব্যসমূহ

Mani Biswas বলেছেন…
খুব ভালো লাগল। নারীর যৌনতা বা যৌন-অনুভব যে খুবই আলাদ, এটার একটা ঈঙ্গিত আছে লেখাটায়। এই অনুভবের কথা আরও একটু পড়তে চাইছিলাম অবশ্য।
নামহীন বলেছেন…
Valoi likhecho. Aarop bhalo hobe.
অলকানন্দা বলেছেন…
বহমান প্রকৃতির সঙ্গে চলমান জীবনের ছন্দ মিলে তার সুরের রেশ রয়ে গেছে ......
রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছে বলেছেন…
নৈকট্যপূর্বক স্তোত্রে অন্তহীন অন্তরঙ্গতার এক অভূতপূর্ব নিদর্শন মেলে।।

জনপ্রিয় লেখা