সম্পাদকীয় | আঙ্গিক | জুন, ২০২০
কবীর সুমন তাঁর গানে লিখেছেন, "ফড়িঙের ডানাতেও এ জীবন দেয় ডাক/ বেঁচে থাক সব্বাই, হাতে হাত রাখা থাক/ সাড়া দাও..."। এই গানের কথা এবং উদাত্ত সুর একসময় পাগল করেছিল আমাদের। আমাদেরও মনে হয়েছিল এই অদৃশ্য ডানায় ভর করে দূরে কোথাও হারিয়ে যাই... মিলিয়ে যাই। মুক্তির স্বাদ চেপে বসেছিল স্বপ্নের কুহকে। তারপর অভিধান নতুন করে চেনালো গৃহবন্দি জীবন। আসলে কেউই চায় না চার দেওয়ালে বন্দি থাকতে। কারণ আমাদের সকল মানুষের একপ্রকার অদৃশ্য ডানা আছে, সেই ডানা রোজ রাতে আমাদের স্বপ্ন দ্যাখ্যায়, মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, গান শোনায় আর খুব হাসায়। এমন হাসি, যে হাসির চোটে জল বেরোয় চোখ থেকে। আহা! কাকে যে বোঝাই! এ হাসি আসলে আনন্দের, উচ্ছ্বাসের, উল্লাসের— এই হাসির রেখায় কোনো বিষাদ নেই।
মানুষ ফড়িং হতে চায়। জীবনানন্দের ফড়িং। সবুজ, লাল, নীল, হলুদ, রামধনু ফড়িং। তারপর সমস্ত পাখপাখালি নিয়ে উড়ে যাবে নদীয়া-নবদ্বীপ, কখনও দিল্লির লালকেল্লায়, কখনও ভিক্টোরিয়ার সাদা পরীকে ছুঁয়ে, আবার কখনও দেশভাগের ঢাকা বিক্রমপুরে। ইতিহাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে সে দেখে নেবে সমস্ত দেওয়ালের হাসিমাখা মুখ। যেন মুক্ত ঝরে। হাজার হাজার মাইল উড়ে চলা পরিযায়ী পাখিদের রূপকথার গল্প শোনাতে শোনাতে তাদের পৌঁছে দেবে দেশের বাড়ি।
জীবনানন্দ তাঁর কবিতায় বলেছেন, সব পাখি ঘরে ফেরে। হ্যাঁ, আসলে পাখিরা ঘরে ফিরতে চায়। রাষ্ট্র যাদের পরিযায়ী শ্রমিক বলে দিল, আমরা বরং তাদের পাখি বলি? সব পাখি ঘরে ফেরে। ফিরতে চায়। কিন্তু ফেরার উপায় জানা থাকে না অনেকের। তাই মরে৷ রাস্তায় মরে। মায়ের কোলে মাথা রেখে মরে। বাবার কাঁধে দোল খেতে খেতে মরে। প্রত্যেকের ছোটোবেলা মরে যায়। কিন্তু উড়ে চলা থাকে। আর থাকে প্রেম, যৌনতার আনন্দ। আর থাকে হাসি।
আঙ্গিক পত্রিকার নতুন কাজ আমাদের সকলের হাসিগুলোকে নিয়েই। এই কাজ ওই অচেনা ফড়িংটির জন্যেও। যার ওড়ার মন আছে। যার ডানা ছাঁটলেও ভেঙে পড়তে জানে না। সেই সকল ইতিবাচকতার দিকে এই অনিবার্য যাত্রা। এই অন্ধকার সময়ে তোমাদের হাসি আর আনন্দ দিতে এই স্বল্প আয়োজন। এসো, ভাগ করে নিই...
সম্পাদক
সুমন সাধু, অলোকপর্ণা
ব্যবহৃত ছবি
প্রতীক দে চৌধুরী
আঙ্গিক ব্লগ | অন্ধকারের উৎস-হতে উৎসারিত আলো | জুন, ২০২০
মন্তব্যসমূহ