সুপ্রিয় মিত্র

Turn off for: Bangla

১.
অমুকের নাম জানতে পেরে

অমুকের নাম জানতে পেরে ছিটকে গেলাম
তোমার বাবা-মা শুধু এটুকু চিন্তায় থাকে
ঘরে ফিরলে কি না…
কার সঙ্গে মেশো? চিন্তা হয়
তোমার অন্ধকার এত পবিত্র। পাহাড়ের ছায়া!  
আলো এত ম্লান- যেন সূর্যে হলুদ শ্যাওলা পড়ে গিয়েছে
কার সঙ্গে মেশো? কথা বলো?
অমুকের নাম জানতে পেরে ছিটকে গেছলাম।
বন্ধু ভাবতাম। ঈশ্বর বললেন- ‘ঘুম হয়?’
না।

ঘুমের মধ্যে মারা গেলে কি মানুষের ঘুম ভেঙে যায়?

এই ক্ষুদ্র স্থুল দেহে তুমি এত জাগ্রত,
অন্য কোথাও তুমি জেগে আছ ভেবে
ঘুমোতে পারি না।

২.
ফুলের শ্মশান

দেশলাই বাক্স থেকে মুহূর্তের জোনাকি বের করে মানুষ সিগারেট ধরায়
চলন্ত গাড়িতে ছাই জোনাকির ভূত হয়ে ওড়ে-
এই দেখা নিয়ে শহর নিজেকে এখনও মফস্বল ভেবে ভালো থাকে; ভাবে এখনও কিছু বন-বাগান আছে।
সেই ভাবনার ভিতর এক ভাড়া ঘরে থাকি।
ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি
ভিড় বাসে ছেলেমেয়ের চেয়ে বেশি তাদের পারফিউম ওঠে,
রাস্তায় রুটে রুটে ছুটে যায় ফুলের শ্মশান

তোমার দেওয়া দুঃখ তো আমি বাষ্প করিনি কোথাও
তবু পারফিউমে ঘামের গন্ধ ঢেকে তুমি লুকোতে পারোনি যে, তুমি মরে যাচ্ছ ক্রমশ

এপ্রিল ফুলের গন্ধে আমার যে অনন্ত দেহ ডুবে আছে
সে দেহের ভাড়াঘরে কোনও তুলসীমঞ্চ নেই।
মফস্বল আর চায় না তাকে গ্রাম-গঞ্জ
দেখতে টেখতে লাগুক!

৩.
ওটা কী গাছ

মেঘকে নামতে এত কষ্ট করতে হল যে,
আকাশের আত্মা বেয়ে দরদর করে ঝরে পড়ছে ঘাম।

তোমায় বুঝতে এত কষ্ট হয় যে,
তোমার কষ্ট বুঝতে পারলে মুখে গান চলে আসে।
গান গাইতে গিয়ে এত কষ্ট হয় যে,
গানের কথা পেটে ফিরে যায় আর
হুম হুম করে থাকে সুরটুকু...

তোমার মেসেজের সমস্ত হুম জুড়ে দিলে
কোন গান বেজে উঠবে?

তুমি একমাত্র আমার ভাবতে এত কষ্ট হয় যে,
স্বার্থপর আলোয় তোমার হাসিমুখের ছবি দেখে বলি-
‘ছবিতে তোমার পাশে ওটা কী গাছ?’

গাছের এত কষ্ট হয় যে,
মেঘের কষ্ট ঘাম, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে পাতায় পাতায়।

৪.
চোখের তলায় সিনেমা হল

এই রাস্তা দিয়ে রোজ অমুক একা হেঁটে যায়।
মাথা নিচু করে হাঁটে, দূর অবধি দেখতে চাওয়ার দৃষ্টি
যেন লজ্জায় মাটিতে ঢুকে গেছে।
অমুকের একাকীত্ব দেখে বুঝে পাশাপাশি দুই নিখোঁজ পোস্টার
বন্ধু হয়ে গেল।
মাঝের দূরত্বের দেওয়ালে ‘সগৌরবে চলিতেছে’র পোস্টার।
সময়ে সময়ে তাদের বন্ধুত্বের ব্যাখ্যা করে
শহরে আসা নতুন নতুন সিনেমার নাম।

অমুক একা একা রোজ পোস্টার পেরিয়ে যায়
আর ভাবে,
কতদিন কোনও সিনেমাই তার দেখা হয়নি...

চোখের তলায় চেপে বসে আছে সিনেমা হল। সিনেমা হলের বেগুনি অন্ধকার।

৫.
‘না' ও ‘হ্যাঁ'-এর মাঝে

অই ভেঙে পড়া শরীরের মাথায় চিরুনি বোলালে বোঝা যায়,
চুল নয়, মাকড়শার জাল। ঝুল এসে চোখের ওপর দুলছে।
ভালোবাসা দিয়ে কী যে স্বাস্থ্যোন্নতি হয়, তাকে আজ চেনাই যাবে না।
কিন্তু পৃথিবীর কোনও পুষ্টি নেই, শরীরের খুঁত ঢাকতে পারে।
তার দক্ষিণ হস্ত এতটাই লম্বা, কোনও উত্তর লিখতে পারে না।
একটা ‘না' ও ‘হ্যাঁ'-এর মাঝে পায়চারি করে সাদা পাতা।
ফিরে ফিরে যে আসার আসে এবং
না থাকতে পেরে চলে যায়।

৬.
ধুলো হয়ে ওড়াও তো ওড়া
ভালোবাসা চাওয়ার কথা মুখে আসে না।
আসে। তোমার প্রতি আচ্ছন্ন না হওয়ার প্রতিজ্ঞা
তাকে অবিলম্বে খেয়ে নেয়।
পরিষ্কার জামার ভেতরে শারীরিক ময়লা লেগে থাকে। তাকেও তো কেচে তুলতে হয়।
ধুলো শুধু রাস্তার তো নয়, মানুষও তারার ধুলো।
শুধু পাখি নয়, ধুলো হয়ে ওড়াও তো ওড়া।

আমার অস্তিত্ব সেই ধুলো
যে তোমার নজরে আসে না,
একদিন চোখে পড়ব ঠিক।

তারপর সবাই তো জানে, কীভাবে
ঝাপটা দেওয়া পৃথিবীর তিনভাগের কিছু জল
চোখের আশ্রয় হয়ে ওঠে

এভাবে কাঁদাবো….

৭.
চুম্বনসম্ভব কাব্য

তুমি যে বয়স্কা মেঘ,
আকাশে পাথর হয়ে ভাসো।
তোমার কাশির শব্দ যে বজ্রপাতের সঙ্গে মেলে,
তার আলো-বিচ্ছুরন নাক-মুখের জল হয়ে ছুটে আসে
আমার দিকে।

এভাবে চুম্বন সম্ভব হয়েছিল। এবং আঘাত।

ভিড়ের মধ্যে তোমার সঙ্গে পাশাপাশি ধাক্কা না লাগলে জানতে পারতাম না আমিও কেমন
পাথর হয়ে আছি। অতএব প্রাচীন আগুন হয়ে
ছোঁয়া লাগে, এটুকুই।

যে-তুমি বয়স্কা মেঘ, এই প’ড়ে ঝরেও যেও না।

৮.
আচ্ছন্ন হই না আমি

যদি অস্থির না থাকি, তবে অস্থিরতা আরও খাবে।
আমার চুপ থাকা লক্ষ্য করে দ্যাখো,
তোমাদের হাসাতে চেয়ে কোনদিকে দুঃখ সরিয়ে রাখি
তোমাদেরই কাছে। আর নিজে হাস্যকর হই।
আচ্ছন্ন থাকা এত তাৎক্ষণিক নয়,
এই বলতে চেয়ে আরও চুপ থাকি
প্রলম্বিত হই।
আমার এমনই নাম, বন্ধুত্বের শব্দার্থ শুধু…
তাই বন্ধুদের মৃত্যুতে আমাকেও চলে যেতে হয়
গাছের আড়ালে… গাছকে জড়িয়ে ধরলে
আলিঙ্গনও তার আয়ুবৃত্ত কোনও।
ছায়ার যুদ্ধে যাই, গাছের অস্থিরতা নিয়ে থাকি

আচ্ছন্ন হই না আমি, গাচ্ছন্ন হই।

মন্তব্যসমূহ

Amaniac বলেছেন…
প্রত্যেকটা কবিতা সুন্দর
-অলোকপর্ণা

জনপ্রিয় লেখা