প্রগতি বৈরাগী




সহজ

সে বলে গেল, “সহজ হও,
ভাঙো, ভাঙো , নিজেকে আরো ভাঙো
সেই থেকে আগুনের সামনে
সেই থেকে হাতুড়ি পিটিয়ে চলেছি
 
গলে যাচ্ছে লোহার মুখোশ
টুকরো টাকরা যত হাতে তুলে দেখি
তারা সব কথা বলে ওঠে
কেউ বলেপ্রতিষ্ঠা, প্রতিষ্ঠা
কেউ বলেপুরস্কার দেবো
ধাতব স্বরের শেষে জ্বলে ওঠে কড়া রোশনাই
একটি টুকরো গিয়ে পড়েছে উঠোনে
সে বললোমাধব, মাধব
আমি তার তাজিমে বসেছি
সে আমাকে ভোরে নিয়ে গেল
দুদিকে পথের পাশে মৃদুমৃদু বইছে সজল
গাছে গাছে ফুটেছে নরম
পাখিরা করছে কানাকানি
বৃন্দাবন বিলাসিনী রাই আমাদের
 
সবটুকু জুড়ে সকল ধূসর ফুঁড়ে
জেগে উঠছে সুনীল সহজ


নির্লিপ্তি এবং

যেহেতু মিলিত ফসলকথা নিয়ত অসম্ভব ছিল-
আকুল বর্ষণ শেষে, বহনীয় ভাঙনেরা এলে
আমরা নিজস্ব মাটি আঁকড়ে ধরলাম

কেন শুধু রক্তপাত, মরা নদীখাতে-
তার থেকে সহনীয়
নিরাসক্ত চৌকাঠ, ধানদূর্বা, আগ্নেয়মাস
একহাতে অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট, অন্যহাতে জন্মনিরোধক
চাপ দিয়ে দেখে নিই, কে বেশি আপন
 
তোমার শব্দে মুখ ডুবিয়েছে স্রোতস্বিনীরা
নিশিপাওয়া কথাবার্তা শুনে ইদানীং
আলো হোচ্ছো, নেচে উঠছে নাবালক ভুরু,
ছবি লিখতে পারা শিসের মত গৌর আঙুল...
আহা, তারা বেঁচে থাক, সুখী হোক খুনসুটিসম অর্গাজমে
 
আমি সেই ভাঙনের, আরো ঘোর ভাঙনের মুখে
পতন সামলে নিয়ে দরজা ভেজিয়ে দিই,
শীতার্ত ঠোঁটে, উদাসীন ধার মেখে রাখি
 
তবু মৃদু কথাকথি হলে, নিষেধ পাথরখানি এখনো গড়িয়ে যায়
ঋতুরক্ত দ্বিতীয়ার প্লাবন আছড়ে আসে, সর্বনাশের ঘ্রাণে
ভরপুর লীলায়িত নদী ,আকাঠ নাবিক আমি,
ভেবে নিচ্ছি অনিষ্ঠ হবে না,

দাঁড়খানি ফেলে সমস্ত উঠে দাঁড়িয়েছি
ফেরার উপায় নেই, হলে হোক এই শেষ ঝাপ
সোহাগী জলের মত গাঢ় হয়ে থেকো

জীবন হে, যতখন পারো ধরে রাখো!


ক্ষেত্র

কবিতার পাশাপাশি
ফোনালাপে ঢুকে পড়ছে
ওটমিল, গোটা জিরে, নুনের প্যাকেট 

ও চাঁদ, ও আমার মুগ্ধ অপবাদ
আচমকা বিপর্যয়ে পৌঁছে দিচ্ছো স্যানিটারি প্যাড

আমরা তো কবে থেকে মিথুন দম্পতি
খোলা বুকে ঠোঁট রেখে
প্রায়শই তবু ডাকোমা
পুরোনো কলের গান যেন...

আসলে এ হঠাৎ শ্রাবণে,
দিগদারি হয়ে গেছে,
খুলে গেছে আবেগের পাউচ
ফলন্ত চাষের জমি প্রাণেবিজবিজ

আজকাল ভয় পাচ্ছি
মুখ দেখাদেখি রদ হলে

শস্যস্বাদ কতখানি প্রাণঘাতী হবে


অভদ্রা

প্রেম বলতে মায়া বোঝো? প্রাণ বলতে মারের আলাপ ?
নিরাপদ কম্পাসে অক্ষপথে খুঁজে নাও, অজুহাত মিলনরহিত ?

ধ্যানে বসবার আগে , হে প্রিয় পীতাভ শ্রমণ,
নির্ভুল  বলে দাও, কতটা উন্মুক্ত হলে
আমিও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যাব চালচিত্র যেন
অক্লেশে অতিক্রম ঠিক ততখানি সংক্রমণ

যাতে, ক্রমশ বিস্মৃত হও
মানময়ী যোনিপদ্ম, নিবিড়তা, জপমুদ্রাক্ষর
অভীষ্ট মুক্তি না মেলে,

যেন নির্বাণবঞ্চিত থাকো শতজন্মভর

মন্তব্যসমূহ

vivaswan datta বলেছেন…
আমার খুব প্রিয় কবিদের একজন! আবারও মুগ্ধতা!

জনপ্রিয় লেখা