বুক চেরা রক্ত | শতানীক রায় | আঙ্গিক, মে, ২০১৯



১ 
একটা দিন খুব আস্তে চলে গেল। তোমার কাজ শামুকটাকে টেনে টেনে খোল থেকে বের করে আনা। বিশ্বের চারণের মতো গোলাকার কিংবা চাঁদের দৃশ্যের সৌম্য আচরণ। এই চুপ হয়ে যেতে থাকি লিঙ্গ অথবা নাভিতে... যোনিতে পুকুর আঁকি সাঁতারের ছবিতে ভূতেরা আশ্রয় নেয়, ধ্বনি তৈরি করে বেগ... অসীম গাড়ির দৌড় শেষ হওয়ার আগে খোলস ফেটে গিয়ে এক-একটা অসহায় শামুক পূর্ব পৃথিবীর কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে। এই যে আমি এলাম তোমার নাকের কাছে রেণু ধরেছি। কপালে চন্দন গাছের বোঁটা। এভাবে গড় গড় করতে করতে হাওয়ার চাকা পাঁজরে মিশে গিয়ে চালকের হাসি আসে। চালকের হাসি ঝরে পড়লে কুটিল মুখ ফুটে উঠতে উঠতে ঘুম আসে। চোখ দুটো অসম্পূর্ণভাবে বুজে আসে বিষ্ণুতে।

হে অক্ষর, আমাকে আশ্রয় দাও। সমুদ্র শুষে উঠে আসছি। মাছের মতো দেখে মাংস হয়ে যাও। উঠছি। আবার ছাল চামড়ার ব্যথা হচ্ছি। দুধ সাগরের মতো আর্তি ছলকে ছলকে পড়ছে বা পুকুরের দুলে ওঠার তরঙ্গ। শব্দের এইসব আঁশ ছেটাতে ছেটাতে যখন বংসহীন মানুষ হয়ে গেলাম, দেখলাম এক অরণ্যমেষ মৃগের ডাক ছড়াতে ছড়াতে আয়ু বোধে মিলে মিশে জখম ধরল বুকে। হে কৃপা, দুধের রঙে বৃষ্টি হতে চাই চকচকে শরের আগায় রক্তের চাপা অঘ্রান মরা চামড়ার কথা মনে করাতে করাতে সব মুগ্ধ মায়াময় করছে! ওহো বন্দনার বাঁশি বাজাতে বাজাতে মাঝরাতে সেই মাটির বীণা স্বপ্নের দৃশ্যে গড়ে উঠতে উঠতে আবছা মরুর আকারে হারিয়ে গেল...

জাল কেটে পাখি উড়াব, সংশয়কে তিরের আগায় রাখি। তোমাকে মাখিয়ে দেখব সরোবরে নেমে স্নান করি। এ হেন রাতে প্রত্যেকটা মুহূর্ত জন্মানোর আগে আমার কবিতা ক্রমশ আলোর দিকে যাচ্ছে। তোমার সবকিছু অস্বীকার করে যখন দেখি একটি মৃণাল শোয়ানো আছে একটি চুল শোয়ানো 'সা' ছুঁয়ে যাওয়া পুরোনো এক দুপুরের দিকে, পেখম ঝরে গিয়ে মধু-আনা দুপুর। আর কতটা রাস্তা ভ্রম দিয়ে যাবে শ্রুতি দিয়ে যেতে যেতে পাপড়ি এবং শরীর এক হবে। এরকম নৃ-মাখা সজ্জার উপরে উঠে বসা গাঙ-পুরুষ তার মৃদঙ্গের কাছে গিয়ে উপুড় হয়, সন্ধ্যা হয়। কেবল জোর করে চাপানো কথামালার ভেতর রক্ত ও মন ক্রিয়া করা বেদ আবার এই কবিতাকে বুক চেরা রক্ত দেয়। হায় যমুনা, আমাকে ভাঙতে দাও। হায় শব্দ, প্রেম দাও। মাটির হই এবং সমস্ত এই রৌরবময় শরীর আমারই ভেতর গলে গিয়ে মাটি হয়ে যাক।

অদ্ভুত অতীন একটা দেহ নীরব হয়েছে কি! সম্পর্ক হলে চোখ এমন বদলে যায় তোমার। আর এ অবস্থা থেকে কি আমি নিজেকে নতজানু হয়ে অসংখ্য অপমান করব মৃদু। অহরহ শব্দ ভাঙে ডিঙিয়ে যাই এই নদী। তট ছিল এ দেহে। দেখেছি গড়ে ওঠো আরাম থেকে চুল দিয়ে ছবি করো ছোটো। শরীর লাভ করার পর ডাগর শব্দ ওঠে তার পর তৈরি করা রাতে তৈরি করা মুখে মন্দ মন্দ রব ওঠে। এবার থেমে যাও থেকে যাও গা থেকে গজিয়ে ওঠায়। তাকে জড়িয়ে গাছের মৃত্যু অবরোধ হয়। হায়! নরম মাংস হাসে, তোমার ধোঁয়ার শরীর হাসে।

  
তাহারা এক অদ্ভুত সকাল নিয়ে এলো। ভ্রমণ যোগে কুচি দেওয়া পর্দা কখন যেন হংসপরম্পরার কথা বলে সুর তোলে অশ্বের। তোমার ভ্রমর উড়ে উড়ে যায়, গিয়ে বসে দুপুর পেরোনো ইটের চাতালে। দূর অথবা বিনির্মাণ এভাবেও আসে। মানুষের আজ্ঞা পরম হয়ে ওঠে। আমার ঠোঁটের চেয়ে আওয়াজের বড্ড আলো। দরজা দরজা ভাবের ঘুম দাঁড়িয়ে আছে, দাঁড়ানোটা এক-পায়ের মানুষের, সারাশব্দহীন শব্দজাত মুখ বাসি নেবে। মাটি ছড়াবে ঘুম অশ্রুভাষার সজল। হে নরম, আরও তুলো হতে গিয়ে কীভাবে একটি হাঁস আরেকটি হাঁসের পিঠে। এতগুলো দৃশ্য বেঁকে ওঠায় ফাটল দিয়ে গোদাবরী আসে। স্নান করি। সময় করে মেষ হয়ে যাই, আর কখনও ফিরি না এ সংসারে, এত রক্ত গ্রহণে নিই না, আয়নায় রাখি, চলে যাই চলেই যাই...

মন্তব্যসমূহ

প্রতিটা লাইন আলাদা আলাদা করে এক একটি কবিতা
মৌষলকাল বলেছেন…
সবকটা কবিতাই কি সুন্দর...অসাধারণ।
Sudip Chattopadhyay বলেছেন…
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
Sudip Chattopadhyay বলেছেন…
একেবারে অন্যরকম ভাষ্য। এই ধারার ভাষা ব্যবহার আমার খুব প্রিয়। বহুরৈখিক। দৃশ্য ও আবহ নির্মাণ খুব সুন্দর। এমন লেখা আরও আশা করব।

জনপ্রিয় লেখা