আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়


বেপাড়ার দিন


থলি ছিল

দিনের তেষ্টা বুকে নিয়ে পেরিয়ে আসছি লেবুতলা। এক একটা বারান্দা তাকিয়ে রয়েছে মা বাবার বেড়িয়ে পড়ার দিকে। দুপুর তোমার বোতল উলটানো হাওয়ার আরেক নাম। সকালের মরা পায়রার ঘিলু খুবলে খাচ্ছে কাকের দল। এবং একঝলক সরে বসলে, আমি দেখতে পেলাম জানলা; একটা খালি বারান্দা থেকে এক ফাঁকা থলি গলায় দড়ি দিয়েছে একটু আগে।


স্নানঘর

গেরস্থের জানলা থেকে ভেসে আসছে দুপুরের দার্জিলিং; কৈশোরের অঞ্জন। পিচ গলে ঘেঁটে যাচ্ছে নিয়ম কানুনের ছবি। আমাদের প্রেম মানে গোলাপি লেডিবার্ড, ছ্যাঁকা মানেই স্নান ঘরে চোখ লাল। পায়ে ঘষে উচ্ছেদ করা সবুজ শ্যাওলার থেকে যাওয়ার ইচ্ছা। বেসুরো গান গাওয়ার লুকোনো প্রশ্রয়। স্নানঘর গেরস্থের অনিবার্য দ্বন্দ্ব যেখানে লাল বালতি এলে কমলা মগের হাতল ভেঙে যায় আর কমলা বালতি এলেই লাল মগের।


যে রোববারে ফেরে

এ কেবল জ্যোৎস্নাদিনই জানে। এক রাস্তার মতো অন্ধকারে যারা অটো না পেয়ে হেঁটেছিল, মাঝে এক সমুদ্র ঢুকে এসেছে ঢেউ নিয়ে। শুধু রবিবার। কাছে এলেই এক ইদানীং পেয়ে বসে দৌড়ে যাওয়াদের। তার গান, তার চুল, তার হেঁটে আসা গোল্ড গ্যালারির রাস্তা দিয়ে লেকগার্ডেন্সে হারিয়ে গিয়েছে এক যুগল। এ ওকে খুঁজছে, ও একে। রবিবারগুলো কিছু স্বীকার করার থাকে, অথচ তোমার বিশ্রামে কেটে যায়, আমার বাজারে। 


নোনা বারমুডা

বিকেল হলেই ক্যালেন্ডারের দিকে ছুটে যাচ্ছে ঘর। একটা ছুটি আর শনি রবির মাঝে দু’টো করে দিন পড়ছে। ছিটকে যাচ্ছে টিকিট দেখা, হোটেলের ছবি পিছিয়ে যাচ্ছে গ্যালারিতে। এ সপ্তাহে তাজপুর গেলে যে বারমুডা পরব ভেবে গুছিয়ে রেখেছিলাম, আজ তা নামিয়ে ফেলতে হলো। শুকিয়ে আলমারিতে আসা অব্দি ক্যালেন্ডার দেখতে পাব না আর। 


রোদ শুকাচ্ছে না

একমাত্র নিখোঁজ হলেই নাম বেরোবে কাগজে। ভাবার পর টিফিনবক্সে হাত বাড়িয়ে আমি রুটির দিক নিলাম যেহেতু তোমার টিফিন। তুমিও তাই তরকারির দিকই নিলে সেভাবে। দেখা হওয়ার মাঝে অনেক দেওয়াল আমাদের, অনেক গঙ্গাকল; দুহাত বাড়িয়ে তাতে তেল ধুয়ে নিই আর ভেবে দেখলে এ জলও একদিন সমুদ্রে পৌঁছবে ঠিক। শুধু তুমি ছুটি পেলেও বাড়িতে বলা চাপ, আমি বাড়িতে বললেও টাকা জমছে না তাই সমুদ্র আমাদের স্বপ্ন দেখাবে আরও কিছুদিন; আরও কিছুদিন লেখা বন্ধ থাকবে এমাসে...


কার্শফের সূত্র

এখানে প্রচুর জট। আমাকে ঠেলে নাও, ও মৃত্যু, তোমার কবলে। একটা গতানুগতিক উড়ে যাওয়া থেকে প্রচন্ড হর্ণের শব্দ ফাটিয়ে দিচ্ছে পর্দা। কিছু দোকান আজও ঝাঁপ তুলছে না। বৃষ্টি হলে আমরা সেখানে ঢুকে যাব। এ প্রত্যাশা থেকে খুব কিছু জীবন রাখি না আর। যতক্ষণ না রাস্তায় জল দাঁড়াচ্ছে আমি স্বাধীন; যেদিন রাস্তায় জল দাঁড়াচ্ছে, ম্যানহোল খুঁজতে বেরিয়ে পড়ছি সকাল সকাল। 


ফ্লেমিং-এর ডানহাত

এক লাইন হেঁটে যাওয়ার মধ্যে বুড়ো আঙুলের অভিমুখে উড়ে গেল আপনার মাছরাঙা। আপনি সমকোণে অনামিকা বরাবর সাঁতার কাটলেন। মধ্যমা বরাবর তৈরি হলো চৌম্বকক্ষেত্র। এরপর ডাঙায় উঠে সমস্ত নুন সমুদ্রে ফেলে দিলেন। দরজার কাছে এগিয়ে এলেন ডাক্তারবাবু। উনি চিন্তিত। হাঁটবার ওষুধ দিলে আপনি সাঁতার কেটে বসছেন, সাঁতরাবার ওষুধ দিলে উড়ে যাচ্ছে মাছরাঙা।

মন্তব্যসমূহ

Shirsha Mondal বলেছেন…
কয়েকটি কবিতা খুব ভালো লাগল। মগ বালতির ব্যবহার নজর কাড়ল।

জনপ্রিয় লেখা