রাজর্ষি দে

কলকাতা




()
এই শহরের চৌমাথায় দাঁড়িয়ে
আমি কপিরাইট লিখে দিই পেচ্ছাবের জলে
জন্মসূত্রে পাওয়া এই বালিধুলো,
মলিন কাগজের ঠোঙা আর কালো পলিথিনের প্যাকেট-
মুরগির নখ খাওয়া তৃপ্ত ফুটপাথ শিশু জানে
এ শহর ফেলতে শেখেনি

()
রাত ঢললে রাজপথের দখল নেয়
নেড়ি এবং অন্য কিছু শ্বাপদ
দাঁতের আগায় পচে যাওয়া বিরিয়ানি মাংসের কুঁচি
আর পথ হারা যুবতীর কচি মাংস
ত্রিপলের তলায় অর্ধেক ঘুমায়
শহরের “অন্য” সন্তানেরা,
এক কান জেগে থাকে
শাসকের বুটের আশঙ্কায়!

()
বৃষ্টি পড়লে আদুল শিশু ভিজতে থাকে,
ভিজতে থাকে নীল ত্রিপল,
কপির খোসা,
মল-মূত্র-ড্রেনের জল;
শুধু কাচের মলে জল পড়ে না
বাজার ফেরত গৃহস্থ আর
পথের ধারের বাজারী মেয়ে
সমানভাবে ভিজতে থাকে
এই শহরে বৃষ্টি আজও সাম্যবাদী,
ডুপ্লেক্স আর ঝুপড়ি বাড়ির ভেদ মানে না

()
দু-চারটে গাছ কোনভাবে টিকে গেছে
ধুলো ঢাকা পাতা ঠেলে দেয় আকাশের দিকে,
পাখি টাখি অবশ্য কিছুই নেই আর!
কারো শিকড় না হতে পেরে
গাছগুলো নগ্ন কষ্ট ঢাকে শুকনো বাকলে
মাঝে মাঝে অবশ্য কাক এসে বসে
দু-দণ্ডপড়ে নেয় “ডিকেলোধ” আর
রেশমা ম্যাসাজ পার্লার”
কলকাতা জানে গাছেদেরও শ্বাসকষ্ট হয়

()
মাঝরাতে গৃহস্থ পাড়ায়
একা পদক্ষেপ দ্রুতবেগে।
এ শহরে বেঁচে আছে কেউ?
বেঁচে আছে ঘরের গভীরে?
প্রতিদিন রোমকূপে বোমা,
প্রতি রাতে নতুন শিকারী!
একলা পথিক রোজ ছোটা
শ্বাপদসঙ্কুল কলকাতা।

()
কলকাতার চিঠি লেখা হয় খয়েরী বর্ষাজলে।
অপাপবিদ্ধা হলুদ পাতায় জল পড়ে,
তার নিচে ভাঙা পিচের রাস্তা।
প্রতি বর্ষায় যে রাস্তা ভেঙে যায়
সেই আমাদের রাজপথ,
প্রতি রাতে যা একটু করে পুরনো হয়
তাই আমাদের সম্পর্ক।
এই শহরে শীতের ঝরা পাতাও
সরানো হয় না;
আমরা ভুলে যেতে জানি,
কিন্তু ফেলে দিতে পারিনা।

মন্তব্যসমূহ

এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

জনপ্রিয় লেখা