শাশ্বতী সরকার
শাশ্বতী সরকারের পাঁচটি কবিতা
ফেরা
কান্না তো মেধাবী ফল, দরজার। কড়া নাড়তে নাড়তেই শীতকাল এসে যায়। দুর্বোধ্য সংকেতে শুধু জেনে যায় লোকে, স্তব্ধ ও হৃদয়! লুপ্ত শব্দে অষ্পৃষ্ট বীজ অনাদৃত ঋতু পার হতে থাকে।
চপল, কিছু ক্ষুণ্ণ
মাধুকরী রীতির ক্ষয়াটে আঙুল,
মিশকিন জন্মের বাটিতে শ্যামরূপ জমে ওঠে, নিটোল মায়াবী, "দয়া জনু ছোড়বি মোয়"... এই অপরূপ জোছনশরীর, এই কষ্টের তীব্রতম আলোর নির্যাস, ফুটে থাকা, কেবল ভিক্ষার... হ্রদের আশেপাশে কেবলই নির্জনবিস্তার, পায়ে পায়ে কাছে আসি, যজ্ঞ হয়ে উঠি।
ভেতরে অবোধদুর্গ থেকে উড়ে যায় নীলকন্ঠ পাখি...
একা
ভালোবেসে ফেলছি, এই আহত আদর, পাড়ায় নতুন বউয়ের মত রোদ, ভ্রু কুঁচকানো ইতস্তত ছড়ানো কাগজ, সিগারেটের জ্বলে ওঠা একবুক, জীবন কেটে কেটে পড়া তামার টাট, তোমার নরম ওমে ভুল করে বলে ফেলা কথা, ন্যাপথলিনের গন্ধের ভেতর জমে থাকা শীত, এছাড়াও পুরনো নিজেকে।
একপাটি জুতো হারিয়ে গিয়েছে, রাস্তায় যতজন-
দেখছি যমজ পরে কিনা, অনেক গরীব হাসি জোড়া দিয়ে যে শরৎ আকাশ, পকেটে পয়সা নেই বলে হেঁটে যাওয়া কলেজের চার কিলোমিটার, তোমার আগের বছরের কবিতা, দেওয়ালে বাসি ছবি, মায়ের শাঁখার মত মনখারাপ, যেয়ে দেখছি সিঁড়িগুলো জলের কাছে নির্ভার, এমনিই খালি পায়ে কাছে যাওয়া চলে।
চলে যাওয়ার মত অপরূপ নির্ভার
তবে মৃত্যুই শ্রেয়।
শালিধানের ক্ষেত কান্না আড়াল করে রেখেছো
আর ঘুম আসছো নিবিড়
শ্যামরূপ, দেখনসর্বস্ব,
এই গ্রামেগঞ্জে কী দিই তোমাকে!
ঠিক কান্নার মত সৎ, ঘুমের মত বিস্মৃত
আসনপিঁড়ি হয়ে তুমি এবার আপন হয়ো।
বিপর্যয়ের পর, স্বরের পর্যটনও নেই আর,
পাঞ্জাবীপকেট থেকে বেলা গড়িয়ে পড়ছে
মেঘমাসে সূচের ব্যথার মত অন্ধকার রোল
বিকেলের কাছে ঢলে যাচ্ছে কামরাঙা রোদ
আকাশও চোখ ঘষে ঘষে অপরূপ লাল করে তুললো,
এখন ক'দিন প্রতিদিন মৃত্যুর ভেতর কীটদষ্ট জীবনে জড়াই!
যতটা জল জানে
তুমি আমায় কতোটা চেনো কলতলা?
হাতের তালু ছাপিয়ে পড়ে যাচ্ছে জল,
ছ্যাঁৎ করে উঠল শ্যাওলাউঠান।
দূরত্ব নামক তীর্থে দরাদরি করে ফিরে যাচ্ছি এবার,
লিখতে বসছি অস্থিরতায়,
উঠে মাথা ঝাঁকাচ্ছি ফের,
কিছু নয়, কিছুই হচ্ছেনা
নষ্ট হয়ে কষ্ট দিচ্ছে শব্দের অসুখ।
নামহীন গাছের কাছে যাই,
হাতের পাতায় তুমি,
নম্র অসুস্থতা,
কেবলই পাণ্ডুর হয়ে ঝরে গেলে
তুমি আমাকে মনে রাখবে, কলতলা?
অঘুম
আমি তো নিছকই ভাবি রোদ,
কমলালেবুর গন্ধের কাছে বিকিয়ে গিয়েছে।
আর রঙ এক অত্যাশ্চর্য মোহ।
অন্ধ ভ্রমরের মত জন্মের কাছে সারাটি বেলা ধরে
গুনগুন গুনগুন...
ঘর বিষিয়ে উঠেছে অন্ধকারে।
আমি তার কেমন রমণী?
আমি কি শুদ্ধচিত্তে শাস্ত্রকথা শুনি?
আমি কি জানিই শোলোক, তাঁর পুঁথিপাঠ!
কেবলই জলের কাছে স্পৃহা।
সে এক অকারণ ভুখ, কষ্টেসৃষ্টে প্রদীপ জ্বালায়।
নিভে নিভে গেলে সুসময়,
ডানার কাছে বশ্যতা চেয়ে রাখি।
আমিতো রোদের বিছন ফেলে গেছি ঘুমের ভেতর,
যে ঘুম স্বপ্নেও আসে না।
মন্তব্যসমূহ