অন্তর চক্রবর্তীর কবিতাগুচ্ছ | আঙ্গিক অনলাইন
অপ্সরা টকীজ/ অন্তর চক্রবর্তী
১
না, কোনও আষাঢ় নয়, গলিখানি মায়ায় পিছল
নিথর চৈত্রের রোদে টেনে নেয় সমস্ত সড়ক
যেন অদূরের কোলে বিছানো সে-রুপোর খরিশ
গরল নিশ্চয়, তবু প্রতিবার তাড়া করে কারা
সদলবলে গর্তে ঢুকে আচমকাই চুপ, তারপর
নোয়ানো ছায়াটি হাতে ফিরে এসে যে-যার মতোন
মিশে যায় ইতস্তত। ও আহ্লাদ, সদ্যরপ্ত ফোঁস্—
রাঙা নয়, নীল আলোয় চলকে পড়ে সূর্যাস্তের নখ
২
দুপুরের ধুলোফুল, তুমি ভারি সুহানা কাতিল্
একে একে ফুটে থাকো সিঁড়িভাঙা বয়সের গা-য়
মলিন লাগে না আর যাবতীয় স্বভাবী হোঁচট
হাওয়ার গরাদ যদি দুরুদুরু হত এ-পরাগে—
তেমন দু-কলি ঝড় মুছে যাওয়া, জলের শরীর
সরল নিষেধে ফের কেঁপে ওঠে সোনালী ইশকুল
অগত্যা আড়াল খুঁজে হতভাগা কিশোরমধুপ
নিজেকে শাদায় বিঁধে, নিজরক্ত শোষে নিরুপায়
৩
ঘোড়াটি নিখোঁজ, তবু উদাসীন রাজনন্দিনীর
দু-চোখ জড়িয়ে এল নিরবধি জঙ্গলের সুরে
শিস্ দিতে দিতে সেই কবেকার ময়ূরমাধব
স্বপ্নের গহীনে তার, পুঁতল ধীর, কাজল বাঁশুরি
এসব দৃশ্যেরই ফাঁকে শয়তানের তুমুল বাহবা
ঘুণের গ্যালারিময় ছুঁড়ে দিচ্ছে সহস্র বিদ্যুৎ
অরণ্য ফাগুন আরও। শ্বেত অশ্ব, মাতাল, নিবিড়—
চিঁহি ভুলে ছুটে মরছে নিশুতির কমলাক্ষপুরে
৪
এ-ভিটের দাওয়া জুড়ে গেঁথে আছে ও-ভিটের হাড়
ও-চুলার অনাহারে এ-চুলার অন্নজল, ওম
এপার-ওপার ঘুমে কী কাঁটা ভাসালে, পুনর্ভবা—
যে-পথে পা পড়ে, তা-ই লাগে বড়ো ছিন্নচরাচর
অথচ সে-কোন্ জেদে রাক্ষসের চোখে দিয়ে ছাই
একাকী দাঁড়িয়ে আজ, অবিকল তাসের কুঠুরি
হেসে উঠছে থেকে থেকে, ছলোছল্ কাদায়। দু-পাশে
দুয়োয় আঙার দুটি রাধাচূড়া, ইভ্ ও আদম
৫
দড়ির আঁধার যত চেপে বসে গলায় ক্রমশ
জানালাটি একাকার, আকাশের অসুখে অসুখে
এমন রুমানা চাঁদ কখনও জাগেনি পাড়াগাঁ-য়
শ্মশানে শ্মশান লেগে, জ্বলেপুড়ে নিপুণ সফেদ—
কতেক ধুলোর ঘায়ে বেঁকে গেল ছুরির আদল
বালিতে কুঠারই শুধু, সেই যে পুকুরমাঝে ডুব্
ফেরেনি কাঠুরে আর। ঢলে পড়ল জোছনাস্বরগ
তারার কাঁচুলি সেজে, অভাগীর মাংসমাত্র বুকে
মন্তব্যসমূহ