রাজেশ চিতিরা-র কবিতা | অনুবাদ সংহিতা রায় | আঙ্গিক অনলাইন
রাজেশ চিতিরা মালয়ালাম ভাষার কবি। আদি বাস কেরালার পাথানামথিট্টা জেলায়। সেখানেই জন্ম। বর্তমানে দুবাইবাসী। পেশায় প্রযুক্তিবিদ, নেশায় লেখক। দীর্ঘদিন ধরে মালয়ালাম সাহিত্য চর্চার সঙ্গে যুক্ত। কবিতা ও গল্প দুই ক্ষেত্রেই স্বচ্ছন্দ। তাঁর কবিতা এবং গল্পগুলি আন্তর্জাতিক প্রশংসা পেয়েছে। মুদ্রণ ও অনলাইন প্রকাশনা দুই মাধ্যমেই নিয়মিত লেখেন রাজেশ। সমকাল, সম্পর্ক, প্রকৃতি, সামাজিক অভিঘাত, টানাপোড়েন উঠে আসে তাঁর লেখায়। গ্যালেরিয়া গ্যালেন্ট সেরা প্রবাসী লেখক (২০১৮), প্রবাসী বুক ট্রাস্ট কবিতা পুরস্কার (২০১৮), ইন্ডিয়ান রুমিনেশনস পোয়েট্রি অ্যাওয়ার্ড (২০১১)-এর মতো একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন রাজেশ চিতিরা। তাঁর বইগুলির মধ্যে অন্যতম:
Unmathathakalude Crash Landingukal
Tequilla – droplets of sea lunacy – a bilingual collection of poems with illustrations
Ulippech
Varavum Kalpamrugavum
আঙ্গিক অনলাইনে মালয়ালাম ভাষার কবি রাজেশ চিতিরার কয়েকটি কবিতা বাংলায় অনুবাদ করলেন সংহিতা রায়।
ক্যাকটাসের স্বর
মূল কবিতা: Voice Of The Cactus
আমি একটা ক্যাকটাস এনেছিলাম
যখন প্রথম বাড়ি এলাম
দু-বছর পর।
বাবা যথারীতি বারান্দায়
ঠিক যেমন দাদু থাকতেন
পথের দিকে চোখ,
স্থির। নীরব।
সেই একই চেয়ারে হেলান দিয়ে
সূর্যের সাথে কথোপকথনে মগ্ন।
যৎকিঞ্চিৎ কথা বলতেন ওঁরা
বাবা আর দাদু।
বলার কিছুই ছিল না বিশেষ।
আমার আর বাবারও…
আমরা মনেপ্রাণে কারণ খুঁজি
কথা বলার।
মাটির টবে
ক্যাকটাসটা বসিয়েছি
বাবার ইজিচেয়ারটার ঠিক পাশেই।
দিনেরবেলা সূর্য কথা বলে
দুজনের সাথেই।
ক্যাকটাসটা ডাল মেলেছে,
একবার সূর্যাস্তের সময়
আমি তার ছোটো কাঁটাগুলো ছুঁয়ে দেখেছিলাম
রক্তে ভিজেছে আঙুল
মনে হল কারও সঙ্গে কথা বলছি
কিন্তু বিনিময়ের উপায় নেই…
বহু বছর পর
বালির স্তুপের মতো
আমি নিজেকে ওই চেয়ারে বসালাম।
রোদে ডোবা গল্পগুলোর রোমন্থনে।
তেমনি এক দিন
ঠিক ক্যাকটাসটার মতোই
উষর জমিতে,
সূর্যের সাথে,
নিজের সাথে,
কথা বলতে শুরু করলাম,
আমি...
বেহালা
মূল কবিতা: Violin
যখন মেয়েটি বিছানা ছাড়ে
বেহালাটা শুয়ে তার কাঁধে
পৃথিবী নীরবে শোনে
বিদেহীর জন্য বাড়িটা
শেষ প্রার্থনায় মগ্ন
ঘরগুলো ঠান্ডা কম্বলের নিচে,
ঘুমের আড়ালে।
মেয়েটির নীরবতা এখন উপচে
দরজা পার।
তার কাঁধের বেহালাও
কি চুপকথার বাসা?
বেজে ওঠে
রান্নাঘর পৌঁছলেই।
বাড়ির স্তব্ধতা থেকে উঠে আসা কোলাহল
শিশুর একটানা কান্নার
অর্থ বুঝতে ব্যর্থ,
মেয়েটির আঙুলগুলো
এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে
ধনুকের মতো, বেহালা বরাবর...
স্টেশন
মূল কবিতা: Station
বাড়ির দিকের পথ
ঘন সবুজে ঢাকা
মায়ের চিহ্ন
সে পথ ধরেই
হাঁটে।
*
এমন নয় যে
অকিঞ্চন অন্নে
ক্ষুধাতুর ছিল সে,
খিদে তার পুরোনো ভৃত্য
এখন আর খিদে
জাগে না আমার।
স্মৃতিতে ভরাই নিজেকে...
*
একটা মাকড়সা
পেয়ারা গাছে রোদ পোহায়
যতক্ষণ রান্নাঘরে ছিল মা।
*
তবুও কোনও মরা পাতা
ঝরে পড়ে না
আমাদের উঠোনে।
গাছেদের ইস্কুলে
মা আমার বড়ো দিদিমণি।
*
উঠোনে বাসনপত্র দেখলেই
কাকেদের বকবক শুরু।
মায়ের কাছে ওরা যেন
দাম চায়, দেখাশোনার...
*
বাবা যেন ট্র্যাফিক সামলাতে থাকে
মায়ের মনে হয় ‘কত ভিড়!’
রাস্তা যেন ভাগ হয়ে গেছে
কাঁটাচামচে।
*
আমি চিৎকার করে কাঁদি
ভিতর ভিতর ডানা ঝাপটাই
হাত চাপা দিই কানে
যদিও কোথাও কোনও শব্দ নেই।
*
বাড়িটা আর নেই।
কেরোসিনের গন্ধ নেই।
মায়েরা কোথায়?
*
আজও প্রতি বছর
মা মিষ্টি বিলায়
৫৪তম জন্মদিনের
‘আজকের দিন’-এর স্মৃতিতে।
মন্তব্যসমূহ