পীযূষ দত্তের কবিতাগুচ্ছ | আঙ্গিক অনলাইন
পীযূষ দত্ত
এক
এই দুপুরে মুসুরির ডালে কাঁঠাল দানা ভেসে ওঠে,
ছাদে, কার্নিশটায় স্নানসিক্ত গামছা ঝুলিয়ে গেছে কোন এক অতৃপ্ত গৃহিণী।
আমি দুপুরের দিকে তাকাই-
আর উপলব্ধি হয়,
যা কিছু তোমার, তা ঠিক পথ খুঁজে তোমার কাছেই আসবে।
দুটো নিঃশ্বাস রেখে বিছানায় শুই।
দুই
যাদের অপেক্ষা করতে বলেছিলাম দরজার কাছে
গাছতলায়, বারান্দার সোনালি রোদে
তারা রইল না
ফিরে তাকাল না মিনিবাসের জানলা থেকে
কার্নিশে বসে হাই তোলে গোলাপী শায়া
জল শুকিয়ে খটখটে হয়ে যায় শরীর-
আমাদের বসার ঘরে চেককাটা মেঝে
কোণে ঠাকুরের আসন
তার কাছে পাক খায় প্রার্থনার ধুনো
মানুষের এ যাত্রাপথ সুনিশ্চিত করো জানাব
সবাই মনে মনে বলে
রাতের বাতাস আরও আর্দোষ্ণ হলে
তোমার গায়ে আঙুল বোলাই আমি
বুঝি-
এ পৃথিবীতে মানুষ স্নেহের নীড় বড়ো তাড়াতাড়ি ত্যাগ করে
তিন
প্রার্থনার সময় ক্রমশ পার হয়ে যায়
অন্ধকার হয়ে যায় মন্দিরের ঘর
এখন তাহিরা সময়
পুরোহিতরা লুটোপুটি খায় বিছানায়
আরও অন্ধকার হয় মন্দিরের গম্বুজ
ধান ক্ষেতে বনবন করে মাজরা পোকা
ঈশ্বর প্রাপ্তির লোভ
পৈতা পাশে রেখে দাঁত বসায় স্ত্রীয়ের কোমলতায়
চার
আমাদের কালবেলা কাটে না
অসুখী গৃহস্বামীর মতো বারান্দায় ঝুলে থাকে একাকী দোলনা
দোল খায় পৌষের রোদ
আমার দাদু ছিলেন দোহারা চেহারার যুবক
পথে-ঘাটে তাঁর হেঁটে যাওয়া নগরের বুকে ছাপ রেখে যেত
আমার মতো কৃশকায় মন যেখানে রাত হলেই নেশা খোঁজে
নীচ থেকে ডাবওয়ালা চলে গেল, সেও মুখ তুলে চাইল না-
জানে ঈশ্বর অবুঝ, জেগে থেকেও তার ঘুমঘোর কাটে না
শুধু বসে আছে কেয়ামতের দিন নাস্তানাবুদ করবে বলে
পাঁচ
আমি যে ঘরে প্রাইভেট টিউশনি করি
সে ঘরে আলো ঢোকে না
সামান্য কাত হয়ে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচি দেখে নেয় কোলাপসেবেল গেট, জলের গ্লাস, পেপার ওয়েট
আঁধার যেন সন্তানহারা বাপের মতো আগলে রাখে সে ঘরকে
মশারি বিছিয়ে রাখে আমাদের মুখের উপর
তার মধ্যে থেকেই আমরা জিভ নাড়াই
কিছু একটা বলতে চাই
মনে হয় নতুন কিছু ভাবলাম হয়তো
নতুন যা কিছু-
যা না ভাবলেও চলে
মন্তব্যসমূহ