নীলাঞ্জন দরিপা-র কবিতাগুচ্ছ | আঙ্গিক

প্রভূত বানচাল 

নীলাঞ্জন দরিপা 


আমার চোখের মধ্যে সাদা কালো ডোরা দাগ আছে 

পাখির খাঁচার শিক, খামখেয়ালে উড়ে যায় পাছে 

তাই স্থায়ী বন্দোবস্ত, এত স্থায়ী, ভেতরে কোথাও 

আর্তনাদ ঘটে থাকলে বাইরে তার সামান্য ফোঁটাও 

নজরে আসে না কারো, তবু কী উপায়ে দেখি উড়ে

এসেছে ঈগল, উফ্, আমার চড়াই ছিঁড়ে-খুড়ে

খাচ্ছেই নিশ্চয়, এত ডানার আওয়াজ তাই বুঝি

বহুদিন পরে এসে গোপন ডেরায় তাকে খুঁজি 

অব্যবহারের চোটে ঝাপসা দেখি, লেখা ওঠা চিঠি 

ঈগলের কাঁধে চেপে উড়ে যাচ্ছে চড়াই পাখিটি 

দূরে যাচ্ছে, যেতে যেতে খুবলে নিল প্রায় অন্ধ দুই

একটি ঈগলের নখে, অন্যটিকে দৃশ্যত চড়ুই 

আমি যে তোমাকে চাই সে আমার অনিবার্য ভ্রম

আসলে নিজেকে কিছু মুহূর্তের প্রকোপে জখম

করে যে সিদ্ধান্তে আসি, নিমেষ পেরোলে সেও পার  

অথচ মগজ থেকে দূর করতে পারি না তোমার 

সত্যি। দেখি, দূর থেকে। নিভৃতে এলেই হাতে আসে

হত্যার নিখুঁত ফন্দী, সে কৌশলে এত অনায়াসে 

মেরে ফেলা যায়, হাত পাকাবার ইচ্ছে হয় গাঢ় 

পুনঃপুন জন্ম নিলে কতবার মারতে হবে আরও

নিশ্চিহ্ন হবার আগে, মেঘ কি যথেষ্ট ভারী তবে

রাষ্ট্রের আদেশে কোনো উপভাষা ঝরল আর কবে

তবুও সে ক্ষয়ে যায় বহুদিনে, ততদিন পর 

প্রতিটি আঘাত ফিরে এসে দেখবে আমিও নিথর 

  

যে গানেই গলা রাখি, দেখি সুর গড়িয়ে গড়িয়ে

অন্ত:পুরে চলে গেছে, এখন এ ভিজে গলা নিয়ে

যাই বলি, নরম শোনায়। বিষুব রোদের তাপ

হাঁ করে গিলেছি, যদি জিভ পুড়ে ঝাঁঝালো আলাপ

সম্ভাষণ শেখা যায়, অধিকাংশে নীলাভ এ গ্রহে

অন্তর্গত লাল তবু অগ্ন্যুৎপাতের কোনো দ্রোহে

হঠাৎ ফোয়ারা, কিন্তু যেই গানই রেখেছি গলায়

অন্য দিকে ঘুরে যাচ্ছে কথা, এত কোমলে বলায়;

কিছুই ঢুকছে না কানে, একে একে সব চেষ্টা বৃথা

হঠাত নিরাশ কণ্ঠে উঠে আসছে নতুন কবিতা

কে তাকে লেখায়, ছিঁড়ে ফেলে, সে কে? সে কার ভিতর

নিজেকে করে তুলেছি অপর্যাপ্ত অশ্রাব্য ইতর?

ছুরির ভেতরে এক দৈত্য আছে, এ জীবনে তার

বাতাস কাটার শক্তি হল না কখনো, তাই ঝাঁপ; 

জলের ভেতরে ছুরি জীবনের ব্যর্থ ভার টেনে

বেড়ায় না, পড়ে থাকে তলদেশে, নরম মাটির 

গায়ে বিঁধবে এমন দু'হাত আর এ জীবনে পাবে 

না সে জানে, কিন্তু তবু শাণিত প্রান্তের জনশ্রুতি

ছড়ায় শৈবালে মাছে,জলজরা দূর থেকে দেখে 

ধাতব শৈল্পিক দ্যুতি, মানুষের বুক থেকে তার

টেনে আনা রক্তের ফোয়ারা করে কাহিনী উজ্জ্বল

কিছু ভারাক্রান্তও করে না কি? ছুরির ভেতরে এক

দুঃখ আছে, জন্মসূত্রে পাওয়া শক্তি কী করে ফেরায়

____

প্রথম প্রকাশঃ আঙ্গিক অনলাইন

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা