মহাশ্বেতা আচার্যর কবিতাগুচ্ছ | আঙ্গিক অনলাইন



শব্দের জন্য আমি

মহাশ্বেতা আচার্য


(১)

বদ্ধ বছরগুলো থেকে আমি শিখে নিচ্ছি 

প্যানিক অ্যাটাক নামে একটা শব্দ

বাকি সব ভয়গুলো ওরা 

আমাদের কানে-কানে বলেছে আগেই

যেভাবে সব শব ছুঁয়ে মরে মানুষের হাত 

প্লাস্টিক পলিথিন শব্দ

অসংখ্য চিতা আর গণকবরে ঢেকে রাখে সমস্ত সোহাগ স্মৃতি

যেভাবে মানুষের হাত ছুঁয়ে-ছুঁয়ে বাঁচে সব শব 


উজাড় গ্রামগুলো আমি ছেড়ে এই এসে বসেছি পশ্চিমে -

আর কিছুতেই কোনো অলৌকিক বিমান

আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না তোমাদের বন্দরে


(২)

ভীষণ অল্পে ফুরিয়ে যাচ্ছে তোমার গলার মেয়াদ -

দিনের সামান্য এক শতাংশে আছড়ে পড়ছে

তোমার নিঃশব্দ স্বরযন্ত্রমালা

আমি জানি না ঠিক কেন 

আমাকে যেতে হয় অচেনা লোকের শীৎকার শুনতে!

ছোটবেলায় আমাদের বন্ধুরা খুঁজে বেড়াতো কিছু এইচ-ডি ভিডিও

আর সহজ শিকার সাজানো থাকতো থরে থরে –

আজ আমাকে যেতে হয় বিকৃত কোন্ পরিবারের ভেতর!

তাদের আশ্চর্য অন্ধকার জল

হাতে-পায়ে লেগে থাকা নোংরার মধ্যে

যে পরিবার একসাথে বাড়ি ফিরবে

তার স্বপ্ন আমাকে খেয়ে ফেলবার আগে

রাশিয়ান রূপকথার ছবিগুলো আমাকেই নষ্ট করতে হবে, অমিতাভ!

ফেরার পথে আমাকে কিনে রাখতে হবে দশ-পঁচিশটা ঘুমের বড়ি


(৩)

শব্দের জন্য আমি 

একটার পর একটা ফ্যান্টাসির কাছে এসে দাঁড়াচ্ছি। 

মানুষজনের জীবনে অনবরত ঢুকে আসছি, আসছি খিদেয়-রান্নাঘরে ।

“কার বাছার জোটেনি দুধ?” এইসব এইসব

আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে তোমার রিপোর্ট, আজ রাত্রেই

দেখি, অন্য গোলার্ধ ভীষণ ছোট হয়ে এসেছে -

এতই ছোটো যে

আমার আঙুলের ফাঁক গলে পড়ে যাচ্ছে সব সুখ সব সাধ

আমি মেয়েদের দেখি, নারীদের দেখি

বিয়েওয়ালা সোহাগবিহীন মুখগুলো দেখি

জানি ওসব শাঁখা-পলার হাত

একটা নীল চাবুক নিয়ে আমারই সামনে দাঁড়াবে!

আর দেখি, ‘আমার কোনো দায় নেই, দায় নেই’ বলতে বলতে সরে যাচ্ছো তুমি

আর আমার এক্স-রে হয়ে যাওয়া হাতগুলো 

কিছুতেই আটকাতে পারছে না আমার কানের পর্দা

“চুপ করো অবিশ্বাসী”

সঙ্গমের পরে যাঁরা বলছেন ‘ভালোবাসিনি’,

তাঁদের তুমি শাস্তি দিও একটু? 


(৪)

ধর্ষকদের সামনে আবার দাঁড়াতে 

ঠিক কেমন লাগছে আমার?


সেই থেকেই তো পালিয়ে বেড়াচ্ছি -

ফুটপাথে তাদের ভিখিরি মুখ 

গড়াগড়ি যায়!

ডিলেরিয়াম - রাতের পর রাত,

কেউ তো বলেনি সেই থেকে 

কুড়ি বছর কীভাবে ঘুমোবো!


(আমি জানি, এটা পুরো আউট-অফ-সিলেবাস ছিলো)

তাই বাসে-ট্রামে অকাতর 

বিলিয়ে দিয়েছি আমায় -


খুচরো পাপে ওদের যেন দোষ নিও না ঈশ্বর!


(৫)

আমাদের অর্বাচীন দেশ - আমার এক প্রাচীন প্রেমিক

প্রাচীনতর প্রেমিকাকে তাঁর

বিক্ষত করেছে পুলিশের লাঠি

সেই দুঃখ নিয়ে তিনি যাতায়াত করে যান আমার ওপর


সেই থেকে কতগুলো প্রশাসন,

কতগুলো দশক গর্ভে ধরে আছি, নিজেই জানি না… 

একটা ম্যানহোলের ঢাকনা, এই যে

তুমি আজ খুলছো, অমিতাভ

এই পাঁক তোমাকেই ঠেলে দেবে বড্ড দূরে

আমি চাই বহুদিন পর বন্দরের ধারে

তুমি আমাকে বলবে স্রেফ দুটো লাইন -


“কারা যেন ভালোবেসে আলো জ্বেলেছিল”

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা