শুভ্র সরকার-এর কবিতাগুচ্ছ | আঙ্গিক
জীবনের পাশে হেরে যাওয়া খরগোশ মোজা খুলে রাখে
মাছের কঙ্কাল
কী সহজ পড়ে থাকে ভাতের থালার
পাশে
হয়তো
সে
জেগে উঠতে চেয়েছিল বিড়ালের
ক্ষুধার ভেতর
হয়তো
এই ভেবে
প্রথাহত সমস্ত পোকা
একটি সার্থক আলো হয়ে
ওঠে
হয়তো সুন্দর কোনও মৃত্যুর জন্য শুধু
হরিণের দাঁতে ছিন্নভিন্ন পাতাটি
মনে মনে বাঘের দাঁতে আটকে থাকা হরিণের
মাংস হয়ে জন্মাতে চায়
একোরিয়াম, প্রতিবেশিনীর নেড়ে দে'য়া হলুদ পেটিকোট
নদীর দাঁতে, পাথর লুকিয়ে রাখে
নুড়ি হয়ে ওঠার প্রসববেদনা
যথেষ্ট দুঃখ পেলেই
আপন ভেবে তবেই কেউ ঘরে তুলে নেয়
সৎ মায়ের মতো ভাত বেড়ে দেয়
খনিজ জল
প্রতিনিয়ত মাছের ঠোকরে ঠোকরে নুড়ির
দূর কোনও পাথরের মনে
তখন-
নির্মাণ শ্রমিকের হাতুড়ির নিচে
সহজ হয়ে ওঠে মরণ
মৃত্যু, জীবনের দিকে ছুড়ে দে’য়া এক আতাফল
কাঠকে জড়িয়ে ধরো আগুন, বলো
কে কাকে পোড়ায় বেশি?
ঝড়ে, গাছের ভেঙে পড়া
ডালে শুশ্রূষার দু’একটা সবুজ পাতাকে দেখে
খোদাকে বিশ্বাস ক’রে
বুঝি কেন মসজিদের ভেতরে না
বাইরে হাত পেতে বসে
ভিখারি
যেমন তোমার প্রসঙ্গ এলে
বুঝি, কতোটা সঙ্গত—
ফসলের দিনে সাপের গর্তে ঢুকে পড়া ইঁদুরের
প্রাণভয়ে, উঁকি দিয়ে মানুষকে দেখা
প্রত্যাবর্তন
মৃত মানুষের হাতেও ছড়িয়ে আছে আয়ুরেখা
তুমি সেই পথ ধরে ফিরে আসো
ফিরে আসো
যেখানে বাড়ির দরজা জানে না
নিজেকে খুলে দিলে কেউ কেউ ঠিকানা হয়ে যায়
ঢেউ জানে না, ভেঙে যাবে জেনেও কেনও সে ফিরে যায় নদীতীর!
ভাঙা পাড়, মাতৃস্তনে শিশুর নখের আঁচড় বুকে নিয়ে
শুধু জানে—
তোমার ফিরে আসা, প্রিয়
অন্ধ লোকটার রং না জেনে
কুড়িয়ে নে’য়া ফুল
যেমন পাইনি তোমাকে
ভীড় লোকাল বাসে, পকেটমারের জিভের নিচে ব্লেড লুকিয়ে রাখার কৌশল হতে পারতো কবিতা। হতে পারতো পত্রিকা বিক্রেতার মৃত্যুসংবাদ বিক্রির নির্বিকার ভঙ্গিটুকু। কিংবা বৃষ্টির মধ্যে দু’হাত ছড়িয়ে ভিজতে থাকা ট্রাফিক পুলিশ। যদিও আমার সাথে তাদের খুব একটা জানাশোনা নেই। তাই ভালো হতো, বন্ধুর মুখস্থ ফোন নাম্বারে যদি তাকে পাওয়া যেতো। কিন্তু পাইনি। অনেক পরে জেনেছি, বিয়ের দিন ঘরের আড়ায় গলায় দড়ি দে’য়া নিলুফা আপার লেখা শেষ চিঠিটা পড়তে পারলে, কবিতা কী জানা যেতো! তবে অনেক খুঁজেও সেই চিঠি আমি পাইনি। যেমন পাইনি তোমাকে।
____
প্রথম প্রকাশঃ আঙ্গিক অনলাইন
মন্তব্যসমূহ