মৌলিনাথ বিশ্বাসের কবিতা ‘অর্থমূল্য’ | আঙ্গিক



অর্থমূল্য/ মৌলিনাথ বিশ্বাস


একটা এক টাকার কয়েন হাত থেকে পড়ে গড়িয়ে গেল --- নন্দন চত্বরে... জুতো-চটি-শাড়ি-সালোয়ারের খাঁজে খাঁজে এদিক ওদিক গড়াতে গড়াতে কোথায় যে হারিয়ে গেল! আবছা অন্ধকারে এলোমেলো ভিড় অনেক খুঁজলাম --- নাঃ নেই গানমেলা জটলা বনশ্রী কাঁদছেন সুখের ঘরের চাবি হারিয়ে আর হারিয়ে যাওয়া একটা টাকা খুঁজতে খুঁজতে আমি বুঝতে পারছি মাত্রাহীন অগোছালো হয়ে যাচ্ছে স্থান-কাল-তুমি আর আমি পৌঁছে গেলাম রবীন্দ্রনাথ থেকে জীবনানন্দের কাছে


নাঃ নেই


আপনি বলবেন এক টাকার জন্য এত হুতাশের কী আছে! উত্তরে আমার ছোটবেলায় এক টাকায় কী কী পাওয়া যেত মনে করে দেখি


১. দুটো বঙ্গলিপি খাতা

২. দশটা ফুচকা বা পেনসিল

৩. দুটো রসগোল্লা

৪. চারটে ঘুড়ি দশটা মার্বেল গুলি

৫. এক প্লেট পরোটা আলুর দম

৬. চূর্ণি নদী পার করতে মাঝি নিত তিন পয়সা 


এককথায় বেশ কিছুটা আকাশ জঙ্গল অনেকটা দিগন্ত ছোঁওয়া মাঠ এক ফালি নদী... বিশ্বাস করুন মিথ্যা বলছি না


নাঃ এখন আর এক টাকায় এইসব কোনও কিছুই পাওয়া যাবে না। মাঝিকাকুদের ছেলেরা এখন টোটো চালায় দশ টাকা ভাড়ায়


তবু আমি খুঁজছি


এই এক টাকার মুদ্রাটায় লেগে আছে অনেক স্বপ্ন অনেক ঘ্রাণ অনেক নিষিদ্ধ স্মৃতি গোপন আকাঙ্ক্ষা --- এতটাই গোপন যে গুগল ম্যাপও তার হদিশ পাচ্ছে না।


হে মাননীয় জীবনানন্দ, আপনি বনলতা বা সুরঞ্জনাকে বলবেন আমার হারিয়ে যাওয়া টাকাটা একটু খুঁজতে? কবিতা শেষ হয়ে যাওয়ার আগে লাবণ্য, আপনি? আমি ততক্ষণে হরির দোকান থেকে এক কাপ চা খেয়ে আসছি...


দিন তো যাচ্ছে সন্ধ্যাও হল


মন্তব্যসমূহ

শিবসৃনদর বলেছেন…
মৌলিনাথের কবিতার মধ্যে এক অদ্ভূত গভীরতা খূঁজে পাই। এই কবিতা ও তাই
নয়নমণি সাহা বলেছেন…
অসাধারণ, ভিন্নধর্মী একটি কবিতা। মনটাকে ছুঁয়ে গেল, আর পৌঁছে দিল ছোটবেলার অতীতে। কবিকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

জনপ্রিয় লেখা