চয়ন দত্তের গুচ্ছ কবিতা | আঙ্গিক
চয়ন দত্তের গুচ্ছ কবিতা
আলো
একটা ভোর হতে আর একটা ভোর
পেরিয়ে,
এগিয়ে আসে আলো,
নরম সেই স্পর্শে
তুমি মুখ ধোও,
সুগন্ধী মেখে স্নান করো রোজ।
দেখি,
আবছায়া চন্দন ঘ্রাণে ভিজে থাকে মাঠ,
ছোট ছোট পা ফেলে,
গ্রাম পেরোয় রাখাল বালক,
আর মাথায় মিষ্টির বাক্স নিয়ে
এগিয়ে আসে, রতন ফেরিওয়ালা।
মোড়ের কাছে ভিড় জমে ,
শাল পাতায় মোড়া কচুরি আর ঝোল,
ধোঁয়া ওঠে।
তুমি স্নান সেরে এলে যে পাখিটি অপেক্ষা করে রোজ,
তাকে আমি ঈর্ষা করি খুব।
কুয়াশাফুল
আমি পাথরের গায়ে আঁক কাটি,
মেঘে মেঘে,
খুঁজি সংঘর্ষের সূত্র।
সূর্য ডোবে,
তোমার ঠোঁটের লালে দেখি রোদ পড়ে ভাঙে,
নরম সেই আলোয়,
জেগে থাকে বাঁকা আলপথ, বর্তির বিল আর ধূসর রঙের মাছরাঙা।
একসময় সন্ধে নামে,
মরা গাঙের জলে, ভেসে ওঠে চাঁদ।
আবছায়া কুয়াশাফুল, আলোর নীল,
দেখি, সব কেমন যেন
জড়ো হয়ে আসে, তোমার চারপাশে।
বাউল
কিছু বিকেল হয় মনখারাপ রঙের,
গাওয়া ঘিয়ের মতো গাঢ় রোদ
লেগে থাকে বাড়িদের গায়ে, নৌকার পালে।
ছোট ছোট দীপের মতো কিছু আলো জেগে ওঠে ওপারে,
পাখিরা ডানা ঝাপটায়, বাড়ি ফেরে।
আর, গোত্রহীন ঢেউয়েরা,
দেখি ছলাত্ শব্দ তুলে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে সিঁড়ির গায়ে।
কিছু বিকেল যেন ঠিক একতারার সুর...
হাওয়ার গায়ে,
তোমার আঁচলের গন্ধ লেপ্টে থাকে।
বিজয়া
সন্ধে নেমে আসে,
পুরনো বাড়ির গায়ে লেগে থাকে কিছু আলো।
পুজো শেষ,
ফাঁকা মণ্ডপে ক্রমে মিলিয়ে যায় ভেজা নূপুরের শব্দ।
ক্রিং ক্রিং, সাইকেল,
পলিথিনে মোড়া বিজয়ার মিষ্টি, শুভেচ্ছা...
জলে ভেজা দুটি হাত,
তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বলে ওঠে,
শঙ্খধ্বনি, ধুনোর ঘ্রাণ,
নিভে আসা আলোয় দেখি,
মায়ের আশীর্বাদের মতো ছড়িয়ে পড়ছে, কাশফুলেদের রোঁয়া।
তিল
আজকাল যখন বৃষ্টি নামে খুব,
তোমার বুকের খাপে দেখি
জল এসে জমে।
স্বচ্ছ নীল সেই জলে,
আঁক কাটে হাজারো আলোমাছ,
ঝিঁঝিঁদের কোরাস, আর
জোনাকির সন্ধ্যারতি।
একটা ছোট টিলায় বসে
আমি সে সব দেখি,
দেখি তোমার ঘুম,
আলতো সাবানঘ্রাণ,
আর ভাঙা শ্বাস - প্রশ্বাস জড়িয়ে,
কীভাবে কেঁপে ওঠে ছোট্ট খয়েরি তিল।
মন্তব্যসমূহ