আদিত্য আনমের গুচ্ছ কবিতা | আঙ্গিক



নামগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি, হয়তো কবিতা খেয়ে ফেলেছে/ আদিত্য আনম

১)

নামগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি

হয়তো কবিতা খেয়ে ফেলেছে।

ক্ষুধা তাকে হৃদয় থেকে মস্তিষ্কে তুলে আনার পর কবিতা মস্তিষ্ক খেতে শুরু করলো; পাঠক সাবধান!

সে আপনাকেও খেয়ে ফেলতে পারে।

সে খুব ক্ষুধার্ত আর উন্মাদ 

আর যথেষ্ট বেপোরোয়া। 

শব্দ করে নয় ধীরে ধীরে 

মনে মনে তাকে জপতে থাকুন।

তাকে যেকোনো নামে ডাকা যাবে

সে কোনো মাইন্ড করবে না। 

হৃদয় খুলে নিয়ে কবিতার কাছে যান

মস্তিষ্কের হর্ন এখানে বাজাবেন না

কবিতার ধ্যানের ক্ষতি হয়

সে ক্ষেপে গেলে নরক ছুঁড়ে মারবে।


২)

চাঁদের এঁটো শরীর থেকে ঝরছে স্পর্শের মোম

অন্ধকার ফাঁদ পেতে বসে আছে অন্ধকারে

দলবল সাথে নিয়ে—

একজোড়া মাতাল পা সাঁতার কেটে

বাড়ি ফিরছে জোছনার পিচঢালা পথে।

ক্লান্ত দুইচোখ জুড়ে সন্ধ্যাবেলা

নামছে হাওয়ায় হামাগুড়ি দিয়ে।

অতঃপর ধীরে ধীরে ঘুরেফিরে শেষে 

রাতজাগা রাত গভীর রাত করে ফেরে।

তখন পথে পথে ছড়ানো ছিটানো ঘুম 

এলোমেলো সব স্বপ্নের ভেতর ট্রাফিকজ্যাম

লেগে আছে নির্মম তাড়না নিয়ে।

দেয়ালের সবগুলো কান ছিঁড়ে নিয়ে গ্যাছে 

ডাকাত চিলেরা।

তার চোখের কালিতে লেখা আছে

তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না কারণ এখানে

সত্য পালিয়ে গেছে ইকারুসের ডানায় চড়ে।

তথাপি অদ্ভুত ভূতের দেশে বিগত কঙ্কালগুলো

অবশিষ্ট জীবন হাতে নিয়ে ঘুরছে দিকবিদিক।


৩)

'ব্যর্থতা' আর 'ভুল' আমার ক্লোজফ্রেন্ড

জন্মের পর থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি

এক স্কুলে পড়েছি 

খেলাধুলা, হাগামোতা, ঘুম ও সঙ্গম সব একসাথেই করেছি; আমরা একসেকেন্ড কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারি না।

'হতাশা', 'বিষন্নতা' আর 'নিঃসঙ্গতা' 

ওরা আমার আপনালোক (কাজিন) 

ওরাও আমাকে খুব ভালোবাসে; সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে।

'দুঃখ' আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে কিন্তু যায় না—তাই তাকেও রেখে দিয়েছি আমাদের সাথে।


মাঝেমাঝে নরক থেকে আমাদের বাড়িতে চিঠি আসে,

চিঠিতে লেখা থাকে 'মৃত্যু' আসবে (সে এখন ঘুমাচ্ছে এবং ঘুম থেকে উঠেই চলে আসবে)।

আমরা চিঠির জবাবে চিঠিতে লিখে দিই

অতিথি আসবে আসুক

অতিথি নারায়ণ, তাকে চিঠি দিয়ে আসতে হবে না

তুমি যেকোনো সময় চলে এসো 'মৃত্যু-সোনা'!


৪)

একটি মাথাকে ঘিরে অসংখ্য চিন্তা 


একটি চিন্তাকে নিয়ে অসংখ্য মাথা 

যদিও এই নিয়ে মাথার নিজস্ব কোনো মাথাব্যথা নেই

তবুও ঘামছে চিন্তার তীব্র ব্যথা নিয়ে।

বুকের ভিতরে একটি কৈ মাছ অনবরত 

ছটফট করছে বেরিয়ে আসার জন্য;

সে কি আমাকে একটা জেলখানা ভাবে?

হৃদয় শান্ত হও—নয়তো তোমাকে

বুকের ভেতর থেকে বহিষ্কার করে দেবো কিন্তু! 


৫)

চলে যেতেই এসেছি, থেকে যেতে নয়

পৃথিবী আমার গন্তব্য না; ঘুরতে এসেছি মাত্র। 

গাইড-এর প্রয়োজন নেই 

পৃথিবী আমার খুব পরিচিত—স্বজনের মতোন।

আমি জানি তার কোথায় কোন ক্ষত

কোথায় সে বিষণ্ন মনে কাঁদছে 

আর কোথায় আনন্দ চিত্তে গাইছে গান। 

হে পৃথিবীর বাসিন্দারা, 

দয়া করে আমাকে পৃথিবী বিষয়ক জ্ঞান দিতে এসো না; আমি পৃথিবীর অর্গ্যান সম্পর্কে জানি।


৬)

আজকের গলা টিপে ধরে আছে 

গতকালের বিষাক্ত হাত—

আগামীকাল গতকাল হয়ে যাচ্ছে 

আজকের জরায়ুতে বসে বসে 

বিমর্ষ এক জন্মহীনতার দণ্ড কাঁধে নিয়ে।


৭)

সব পাখি উড়তে জানে না, জানি—তবুও

সারারাত হাওয়ার সাথে কথা হয় 

আমাদের প্রধান ভাষা অভিমান 

উদর ও উনুন সংক্রান্ত বাক্য বিনিময় শেষে

আমাদের ক্ষুধারা ঘুমিয়ে পড়ে—আমরা পারি না।

রাত্রি এক কালো পাকা ফল

আমরা তা কুড়াতে কুড়াতে বৃদ্ধ হয়ে যাই।

নিয়তির অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালিয়ে আমরা বসে থাকি আর আমাদের ভাবনার ভিতর দিয়ে 

উড়ে যায় ক্ষুধার্ত চিতাবাঘ।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা