অরিত্র সোমের গুচ্ছ কবিতা | আঙ্গিক



অরিত্র সোমের গুচ্ছ কবিতা


অভিশাপ

পাথর ছোঁড়ার মুহূর্তে, শয়তানের ঘর থেকে 

                     বেরিয়ে এলেন দধীচি

বাঁধন খুলে মেলে ধরলেন ঊর্ধ্বাঙ্গ পৃথিবী

টসটসে চোখে সেইদিকে এগিয়ে গেল শয়তান

এতক্ষণ যারা পাথরে ছিল ব্যস্ত,

দধীচির স্তন্য পাওয়ার লোভে

                     খুলে দিল চামড়া


সুডৌল ফানুস ধরে দধীচি দেখছেন

দেখিতেছেন

স্পর্শ পাওয়ার আগেই— সমূলে গেঁথে নিচ্ছেন 

                     বজ্রাহত ছোরা


সেই রাত থেকে

তরুণ শৃগালীর মাংস উপভোগ করে চলেছে

তাহারা

আমরা 


এবং, অজিতেশ 


পরিচয়

মোটে বারো তখন— কোনও গভীর দুপুরে

সে প্রত্যক্ষ করেছিল, কতটা মসৃণ হলে

সরীসৃপের দেহ

          উড়তে পারে দেওয়ালে


আপেলের রশ্মি বেয়ে, একটু একটু

জল পড়ছে।

          খনন অব্যাহত


কাঠুরের আওয়াজ করিডোরে ছড়িয়ে পড়ছে ঠায়

কফিন আর আয়না — ধ্রুপদী বদলের পাশে

          একটা বয়স, গাছ হয়ে উঠছে


সে এখন সরীসৃপ খুঁজে বেড়ায় ভেতর ভেতর


সে এখন,

আপেলের ছুরি পেলে — ফালাফালা করে ফ্যালে

                         আস্তিন ও পরিচয়


এসবই আমার পাপ

সমস্তকিছু ছারখার করে, এইমাত্র বেরিয়ে এলাম জলে। আমাদের জামা জুড়ে অপরাধবোধ। প্রশ্রয়ের যাপন চাইনি বলে বসে আছি শৈশববেলা ধরে। নদীখাত শুকনো এখন; তারাময় রক্ত প্রতারিত করছে না আর। ভাঙা কাচে নিজেরই মুখাগ্নি আসে। জ্বলজ্বল করে পৃথিবীর ঘর। সেই পাপে শুদ্ধ হতে হতে, বাংলা ভাষা, দ্যাখো কেমন শ্মশানজন্ম উপভোগ করছি। দ্যাখো, এই অখাদ্য নাভি জুড়ে কেমন সেঁধিয়ে আছে ভয়। জলার ভেতর মুখ গুঁজে কেমন ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছি ইষ্টনাম।

দু’ঠোঙা মুড়ি নিয়ে ভাবি ন্যাড়াপোড়ার দিন। একটু একটু করে দিন ফাটে। শরীর ছুঁয়ে এগিয়ে আসে হলাহল। সমস্ত আয়ু গলে গেলে হাতে পড়ে পরশমণি। তাকে ভয় করো। খানিকটা দেখে ছুঁড়ে দাও তোমার অনাদর। নীহারিকা, এতক্ষণে তো কানে এসেছে হাতের শব্দ। এখানে মৃত্যু উৎসবময়; আড় কেটে বেরিয়ে পড়ছে প্রতিটি হাসি। এই দ্যাখো ঝরে পড়ছি বালিশের ভেতর। তোমার শব্দ ভিজে যাচ্ছে; ছাড়াতে চাইছ; অথচ একে অপরের ভেতর হাত ঢুকিয়ে ঘেঁটে দিচ্ছি ইহকাল পরকাল।

এই নাও সহস্রপদ্ম। এই নাও পাপবোধ। কুকুরের দল তোমার নিদ্রা ছিঁড়ে খাক। জ্বলে ওঠার আগে, পৃথিবী, জানিয়ে গেলাম


তোমার নীহারিকাজন্ম হোক।  

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা