অর্ণব বসুর সিরিজ কবিতা | আঙ্গিক

 


বিগ্রহ

১)

বিরল রোগের বয়স পেরিয়ে তোমাকে চিনি। ঈষৎ দুঃখ হয়। স্মৃতিচিহ্নে ভেসে ওঠে বাল্যকাল, বুক চেরা আলো। আলোর ভেতর দেখি জমাটি অবরোধ, কিছুতেই ভাঙা যাচ্ছে না অপরিসীম বাধাতেও। অপর দিকে এও এক লড়াই, শব্দহীন দমিয়ে রাখছ চিৎকার। তুমি তো ততটা দূরে নও, বাস-ট্রেন পেরিয়ে গঙ্গার ঘাট। ঘাট ছাপিয়ে জল আসে, শীতলা পুজোর দিন। কবিতা শোনাই তোমায়। কুলোর গায়ে ক্ষমাসুন্দর বাতাস; ঠান্ডা- তোমার চোখের মত। হাওয়া দিই, ক্লান্ত নৌকার মত মুদে আসে চোখ, ঘুমিয়ে পড়ি।

ঘুমের ভেতর হেঁটে যায় মেষপালকের দল...


২)

ফিরতি পথে আলো পড়ে, মাথার ভেতর ঘনিয়ে ওঠে অপরাধের মেঘ। না জানিয়ে এতদূর এসেছি, অথচ ফেরার কোনো তাড়া নেই। দীনবন্ধু, তুমি জানো আমার অপটুতা, মায়াবী সংসার ছেড়ে এই জলের কাছে বারবার ফিরে আসা। জলে প্রবল ঘূর্ণি ধরে, যেন অকস্মাৎ আছড়ে ফেলবে তোমার পায়ে। ঘুঙুরের আওয়াজে ভেঙে যায় মৌনতা, আয়ুষ্কাল ছোট হয়ে আসে, শরীর খুলে যায়। কারা যেন গোল হয়ে নৃত্য করে, ঘিরে ধরে চারপাশ। এভাবে গোপন কুঠুরিতে নিয়ে গেলে অথচ সাহস নেই কপালের ভাজ দেখে চিনে ফেলব  পরনের তিলকমাটি। দরজা বন্ধ করি, আয়নার সামনে দাঁড়ালে হাতের মুদ্রায় ভেঙে যায় আমার নগ্ন কাঠামো...

দীনবন্ধু, প্রবল জলোচ্ছ্বাস; আমাকে রক্ষে করো।


৩)

মিনতি করো প্রভু, এই জল ভেঙে ক্লান্ত লাগে শরীর। ধাক্কা খেয়ে খেয়ে এতদূর অশান্ত স্রোতে এসে তোমায় বড় ভয় করে। আমি তো বরাবর আড়াল চেয়েছি, ভীষণতর আড়াল, যাতে কেউ বুঝতে না পারে তোমার উল্কি থেকে কতখানি আগুন ঝরে পড়ে। লেলিহান শিখার ভেতর আমাকে চমকাও তুমি, মেটাও ক্ষুধা। সে ক্ষুধা পাহাড়সম, ত্রিকাল ভেঙে আসে, হিংস্র বাঘের মত টান মারো চামড়ায়- আর আমার নির্লজ্জ বেহায়া শরীর থেকে রক্ত ঝরে পড়ে। এরূপে দেখিনি তোমায়, সকল সন্দেহ শেষে তোমার গর্ভ থেকে ঝরে পড়ে উজ্জ্বল কান্নার আওয়াজ আর সমস্ত আকাশ ভেঙে শরীরের কাছে চমৎকার বৃষ্টি।


৪)

নিষিদ্ধ বাতাস পেয়েছি কপালগুণে, ভক্তিরসে মাথা ডুবে যায় এযাবৎকাল। এই বুঝি তোমার পায়ের ঘুঙুর থেকে ঝলসে উঠল বারুদ। সামান্য এক জীবনের ভেতর যে কোনো আগুনবিধ্বস্ত পথই বড় চেনা লাগে, এতটুকু জল নেই, হাওয়া দিলে শরীর খেয়ে যায়। কী অসীম শক্তি সাধন করেছো প্রভু, সূর্যের তপ্ত আলোয় আমাকে প্রহার করো। মূর্ছা যাই, মাথার ওপর নেমে আসে রুক্ষ, শুষ্ক এক কালনাগিনী, মেঘের ভেতর সে যেন অকালে আমার আষাঢ় টেনে খায়...


৫)

জিভ বার করে আছো, শিয়রে তোমার গোপন জাদু। অস্ত্রহীন কৌশলে বেধেছো জটিল, নাগর আমার! সামান্য তেষ্টায় কাঁপন ধরে, দেখি তোমার জিহ্বার রজোগুণে অসীম ব্রহ্মাণ্ড পিছলে যায়। ভেসে যাই, এ আঁশটে পৃথিবীর পরে, জানলা দিয়ে আলো ঢোকে, দুপুরের ঝাঁঝালো আলো। কানের লতিকায় কামার্ত কুকুরের মত ঝরে যায় লালা; প্রভু, সন্দেহের কাছে আর কত বাতিকগ্রস্ত হব বলো! বিকেল-সন্ধে চোখে আমার আদিম নাচ, ভূতগ্রস্ত দেহ। সামান্য পায়ের নখরে হৃদয় ছিঁড়ে, নিয়তির সম্মুখে অকৃত্রিম ঘুঙুর তোমার; আওয়াজে আওয়াজে মাথার ভেতর রক্ত ভেসে যায়...

মন্তব্যসমূহ

Jyotirmoy Goswami বলেছেন…
বাহবা! ভালোই লাগলো পড়তে। আধুনিক ও ঐতিহ্যের এক যুগ্ম বুনোট লক্ষ করা যায় !

জনপ্রিয় লেখা