পাঁচটি কবিতা | আব্দুল আজিজ | আঙ্গিক, মে, ২০১৯
প্রিয় উপত্যকা
যখনি আসি মানুষের উপত্যকায়
এক-পা দু-পা করে দখল হয়ে যেতে থাকে
সেই উপত্যকা - এখন
আর আমাদের নেই,
প্রার্থনা প্রাঙ্গণে যে ফুল ফুটত, ইদানীং সেখানে
দাঁড়িয়ে আছে
ভীতিপ্রদর্শন কৃত সাইনবোর্ড আর বিধার্থ নিয়মাবলী।
আমাদের চোখ হয়ে উঠেছিল যেন প্রিয় উপত্যকা
মাখনের মত তার মাটি
কিতাবের অক্ষরের মত একেকটা বৃক্ষ আর শস্যভূমি ছিল অতি পবিত্র
হাটুমুড়ে সকল প্রার্থনা উপচে পড়ত, উপত্যকা, প্রিয় উপত্যকা।
ভোর বলতে এখানে কিশোরীর বেড়ে ওঠা
রাত বলতে এখানে যুবকের গুম হওয়া মৃত্যু
বৃদ্ধের মৃত্যুগুলি আমাদের শতাব্দী শেষ এ কথাটা মনে করিয়ে দেয়
ওরা ঈশ্বরকে বিপ্লবী বানিয়ে, রেখেছে করে গৃহবন্দী
একদিন ওরাই ঈশ্বরের বাঁচার জন্য বিপ্লবীবাদ সৃষ্টি করেছিল
ওদের কে গৃহবন্দী করবে?
উলের মত নরম ছিল প্রেমিকার হাত
তার কমলা লিপিস্টিক যুক্ত চুম্বনরস ধুয়ে দিত, অরণ্যবাসের দিনগুলি
টিউলিপের ফুল যেন জানাজায় উপস্থিত মানুষের মাথা
সিজদা ভঙ্গিতে নদীর ঢালুপথ -
এখন মরুমাস, নারীরা পেটে পেটে গর্ভিণী
অন্ধকার জলাশয় থেকে উঠে আসে একেকটা দুপায়া হাঙর,
তাদের চোখে তিনহাজার ভোল্ট পাওয়ারের ঝাঁঝালো আলো ;
জিব্বাহ করাতের মত কাটা আর ভয়াবহ লিঙ্গের স্তুপ
আজ গ্রাস করেছে উপত্যকা আমাদের প্রিয় উপত্যকা।
আগন্তুক
কতদিন মাঝামাঝি একটি নদীর গতিপথে
ইলিশের ঝাঁক এসে ফিরছে বন্ধ্যাত্ব নিয়ে,
যদিও আকাশে বর্ষা, জমিনে লাঙল ঠেলছে
মেয়ে গরুটা - অভাবে পুরুষ সংসারে
ভিরছে কষাঘাত নির্লজ্জ মতামতে।
অরণ্য বলতে অন্ধকার ছাড়া কিছুই বুঝিনা
মাটির গন্ধ যেন পরিচিত নারীর বগলের বাস,
ঢলঢলে শরীর দেখলে জিন্দা পাগলার কথা
দৈবক্রমে মনে চলে আসে আগন্তুক সন্ন্যাসিনী হয়ে
যন্ত্রণা এ সুন্দর চেনা, যকৃত পেঁচিয়ে উঠছে কৃমি
মরশুমে মরশুমে শুকিয়ে কাঠ সাধের আবাসভূমি।
ঈশ্বর ঈশ্বর খেলা
আমি যখন মায়ের স্তন টেনে খায়
তখন কেবল মাকেই আমার ঈশ্বর মনে হয়েছিল
কারণ ঈশ্বরই আমাদের আহার দেন।
আমার পিতাকে মনে হয়নি ঈশ্বর
কারণ -
পাড়ার গেঁয়ো যোগীর মত সারাবেলা রুক্ষ দুপুরের শেষে
প্রসাদ নেয়ার ভঙ্গিতে দুহাত পেতে
তিনি বাড়ি এসে ঢুকতেন,
তখন মাকেই দেখেছি ভাতের হাড়ি ঠেলে দিতে ক্ষুধার গুহাদ্বারে-
তখন ও মা ঈশ্বরের মতই মহান
কারণ ঈশ্বরই আমাদের আহার দেন।
নারীগ্রহ ও অন্যান্য পাপ
গতকাল যে মেয়েটি সদ্য ঋতুমতী
আগুন আগুন গতর,
রক্ত লাল ব্যথা, অসহ্য ষাঁড়ের দহন
আজ মেয়েটি আমিষের তালিকায়।
অন্ধকারে, গোপনে কিংবা নদীর স্রোতের মত দিনে
গৃহে অথবা বৃক্ষের আড়ালে,
হাজার হাজার খন্ড দেশ বিজয়িনীর সুগন্ধ -
তাঁতির ঘরের পুরুষ তবুও বল্লম নিয়ে তৈরি শুদ্ধ রাতের সন্ধানে
সন্দেহ নেই
আপেল বলই বা গন্দম বল যেন এই ফল নারীর পরিপূরক,
ইন্ধন পাপের চিহ্ন - অবলা, জাতিকা, নারী, দেবী কত নাম
সন্দেহ নেই
পাপ শুনলেই যেন সহবাসের মুহূর্তে চুপসে পড়া বেলুনের মত দেহটিকে পাপের বাহন মনে হয়।
তবে পুরুষ কি পাপ পরখ করতে করতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে?
ইতর অবয়বে! সাথে বরদান লিঙ্গের অপর নাম
খোঁচা দিয়ে সৃষ্টি,
নিশ্চিত পুরুষ ক্লান্তি শেষে নিজের পাপ নিঙরে ঢেলে দেয়
উপায় নেই, আদি পাপ বহন করার একটি শরীর দরকার
যার নাম আমরা দিয়েছি নারীদেহ।
ভদ্রতা পরিহার করুন
ধরুন বকের গলায় আটকে গেছে খলসে মাছ,
ভাতের দলা নিয়ে দৌড়ে আসছে রাঘববোয়াল
ধরুন তবুও
সভা সমাবেশের শেষে
মুরগির আক্রমণে শেয়ালের ক্ষত বিক্ষত লাশ
এবং
বকের ইনজুরি নিয়ে মহামান্য! কোন হলনা মিছিল
কমলাপুর হয়ে শাপলা চত্বরের ঠিক মাঝামাঝি।
আটকে গেছি প্রতারণার কারেন্ট জালে
জলদস্যুরা কয়েকজন, বেশ মোটা ভেটকির মত ভুঁড়ি
চোখে গুপ্তধন আর লুট সম্পদের নকশা!
দাদা নমষ্কার
স্যার সালাম
যা আছে দিন, বকেয়া চুলকানির জ্বালায় আছি মশাই,
পাছায় উঠেছে ফ্যাসিবাদী ফোঁড়া
টাকার অভাবে যেতে পারছিনা কলিকাতা হারবাল,
দাদা আপনাদের ভাগিয়ে দুই পয়সা করি
ডর দেখায়-
কবিরাজের মত যত সব উঠতি ছেলেদের বিভিন্ন যৌন রোগের ডরের মত।
তবে একি - শালা, মাদারচোদ, কুত্তা কি অওলাদ
এমন কিছুর আগেই
কথার জলোচ্ছ্বাসে
উপকূলীয় ভন্ডের মুখে বাসি স্নোর মত ছোপ ছোপ দাগ ফেলে
তিনি বেরিয়ে গেলেন!
আশ্চর্য মহাবাণী -
এমন চুতমারানির কাছে ভদ্রতা পরিহার করুন।
মন্তব্যসমূহ