কবিতাগুচ্ছ | সাঈদ শ' | আঙ্গিক, মে, ২০১৯



বসন্তবিরহ


হাওয়ার সাইরেনে
উড়ে.. দূরে
পাখিরা কেটে কেটে যাচ্ছে
রৌদ্রের ছায়া

কালের রেডিও বাজছে
ক্ষীণ ভলিউমে;
এখন প্রমত্ত বসন্তের ঋজুগান..

চোখের মোহনশোভা হরণ করে
পলক ফেলে, মুহূর্ত
হেঁটে যাচ্ছো
ছাতার ভেতরে একা তুমি-
খাঁ খাঁ;
আমি প্রচণ্ড দুপুর।



কবি


শীতের অলস সকালের কাছে
খুলে রেখেছি সমস্ত সম্ভাবনা

মৃদু হাওয়া আর উষ্ণ রোদ
আমাকে গিলে খাচ্ছে
ভাঙা আলো আর গভীর অন্ধকার
আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখছে

দু'চারটে দেয়াল চিন্তাকে বন্দি করে রেখেছে
পথ পৌঁছে দিচ্ছেনা কোনো অসীম ভাবনায়
পাঁচ সাত কাপ চা আর এক প্যাকেট সিগারেটে
কেটে যাচ্ছে ক্লান্ত একেকটি দিন

নদীর মতো এক দীর্ঘকবিতা
আমাকে পথিকের মতো ঘুরিয়ে মারছে
পাহাড়ের মতো এক মহৎ কবিতা
আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে ভিখিরির মতো
সমুদ্রের গর্জনের মতো প্রতিবাদী কবিতা
আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে
আমি লিখতে পারছি না।

ভোরের কুয়াশাপাখির মতো ঝরে যাচ্ছে সম্ভাবনা
আমাকে অবসন্ন করে রাখছে
কবিতা লেখার অদম্য ইচ্ছে
আমাকে অস্থির করে তুলছে
লিখতে না পারার যন্ত্রণা

এই কবিতা লেখার ইচ্ছে
আর না লিখতে পারার মাঝে
আমি এক চরমপন্থি কবি হয়ে উঠছি শুধু



কালিদহ গ্রাম


মায়ার নাম-
দূরের অতসীপুরে কালিদহ গ্রাম
বৃষ্টির আঘ্রাণে;
উড়ে আসা স্বরণীকা যেন।

পুরনোসব গল্পের ভেতর
একা মল্লিকাবনে-
সাতটি জোনাকির ছায়া নিয়ে হাঁটা

স্মৃতির আঁজলায় নাক ডুবিয়ে
পিতার অমলিন পাঞ্জাবিজুড়ে
মা'য়েরই লেগে থাকা ঘ্রাণ শুধু

মায়ার নাম-
জলের শরীরে জ্যোৎস্নার আদর..

ঘরের নামে বাড়ি ফেলে যাওয়া
ঘুরে ঘুরে ফের; নিখোজ আমাদের
ফিরে আসা সেই বাড়িরই আকর..


আত্মহত্যা


ভাবি- জীবনকে একবার চিনে নিলে মরে যাওয়া সহজ। মানুষ তবু মৃত্যু ভয়ে আতকে ওঠে। তিনরাত অন্ধকার ঘরে গুমড়ে পড়ে থাকে।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলে স্নিগ্ধতা খুলে রাখে জানালা। পাখিদের কহল আর চা'য়ের কাপে চামচ নাড়ার শব্দ আলাদা করতে পারলে জীবনকে স্বাভাবিক বলে মনে হয়। আর মনে হয় চার বছর আগের প্রথম বিচ্ছেদ পরবর্তী দিনটিও এমন স্বাভাবিক ছিলো!

অবসরকালীন ট্রেনভ্রমণে আখাউড়া কিংবা সিলেট যাবার পথে জীবনকে মনে হয় আট বছর বয়সী শিশুর শৈশবের মতন সুন্দর।
লোডশেডিং এর রাতে শান্ত হাওয়া এসে আন্দোলিত করে, রহস্যময় গন্ধ ছড়ায়। ধীরে শীতল করে মন; যেন মনে হয় পুরোনো এক নদীর জল আছড়ে পড়ছে বুকে। দুটি জোনাকি এসে চোখের সামনে মিটিমিটি করে। একসময় জ্বলতে জ্বলতে নিভতে নিভতে দূরে চলে যায়, দৃষ্টির অন্তরীণে।

জোনাকির নিভে ও জ্বলে ওঠার মতো এই জন্ম-মৃত্যু। আমি তেরোটি আত্মহত্যার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘুরছি রাত্রিদিন। শুধু প্রতিটি আত্মহত্যা শেষে, আরেকটি নতুন জন্ম বয়ে চলেছি, আবার।


বাংলা


ইদানীং তোমাকে দেখি আড়ালে আবড়ালে
কেন মুখ লুকাও? কোন অপরাধে?
গোধূলীর মতো তোমার খানিক বিচরণ
তবুও যেন শতরঙের রহস্যেমোড়া

আজ নক্ষত্রের নিচে উল্লাসধ্বনি নেই
আজ সূর্যের নিচে মলিন মুখ তোমার, গ্লানিময়

হে আমার দুঃখী বর্ণমালা
কার দুর্বার শাসনে তুমি মুছে যাচ্ছ, ম্লান?

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা