দেবহূতি সরকার




নামহীন কবিতারা এক একটা লাফ

তোমার তত্ত্ববিশ্বের ছিদ্রপথে গলে যাব।
পর্দা অসংখ্য ছিদ্রময় এক কাপড়।
কাপড়ের বুননে জুড়ে দেব গল্প।
তুমি ছিঁড়ে দেখতে চাইবে,
আমি সেই ছেঁড়া পাড়ের সুতো তুলে তুলে,
ফোঁড়ে ফোঁড়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেব জীবন।
মেরুদণ্ড সোজা রেখে ভাঁজ হওয়া শিখেছি
যখন,
সতীচ্ছদের মত আমাকে আর কিছুতেই
ভাঙতে পারবে না।
ভাঙার আইডিয়া নিয়ে কুরে কুরে মরবে।

করুণা অপারবাহী।
তোমাকেও গিলে নেব আমার ভেতর।




কতবার যে শূন্য থেকে শুরু করি।
টমবয় মেয়েটির চুল বাড়ে।
তারপর রোগা হয় প্রাণপণ,
কিছুতেই ব্রেসিয়ার খোলে না,
এমনকি স্বপ্নেও না।
উজ্জ্বল কালো ত্বক ফ্যাকাশে হয়,
সাদা হয়, হাসিটি ইতস্তত।
কালো বেসে রঙের পর রঙ চাপে।
সব রঙ শুষে গেলে
মেয়েটি আঁকে কাটা গাছের পড়ে থাকা গুঁড়ি
আর ঝরা পাতা।
মেয়েটির গা জুড়ে বর্ষবলয় জন্মায়।

আর কয়েক পাক খেলেই
সে ফের চারাগাছ থেকে শুরু করতে পারবে।



হাসপাতালে ঢুকে পড়লে
আর কিছুই প্রমাণ করার নেই।
হয় বাঁচো অথবা মরো।
যন্ত্রই প্রমাণ করে দেবে তোমার হয়ে সবকিছু।
তার আগে অবধি কত কী যে প্রমাণ করি।

মাসি প্রমাণ করে ব্যথা-
মনে নয়, বাস্তবে।
গা বমি বমি ভাব-
ভাব নয়, রস।
ডাক্তার বলে দিলে বিশ্বাস করি।

এদিকে আমি প্রমাণ করে চলি মাথা।
উপপাদ্যের মত বার বার ধরে নিই - নেই।
তারপর নেই থেকে আছে।
লাল রঙ ধরে নিই নীল বলে।
বর্ণান্ধ বালকের মতো তুমি
লাল রঙ দেখতে পাও না।
আমিও ধরে নিই তাই।
তোমার নাকচ করাগুলি মেনে নিই, আর
ফের ডিগবাজি খেয়ে শরীরে ফেরত আসি।
এই চলতে থাকে মৃত্যু অবধি।

কিন্তু আমি তো মরিয়া প্রমাণ করব না,
আমি মরি নাই।



একটা লাফ দেবো ভেবেছিলাম।
সুবিশাল একটা লাফ।
অনেকেই যেমন দিয়ে থাকে।
খুব জোরে দৌড়তে শুরু করলে,
দিগন্ত অবধি ফাঁকা দেখলে
একটা লাফ দেওয়া ছাড়া
আর কিছুই করার থাকে না।
একবার লাফ দেবো ভেবে ফেললে তো
আরোই কিছু করার থাকে না।
দিগন্ত অনেক দূরে হলে
মাঝখানে কি আছে বোঝাও যায় না ঠিক।
অধিকাংশ লাফই তাই খাদে গিয়ে পড়ে।
যে কয়েকটা বেঁচে যায়
ফিরে এসে বুঝতে পারে
সে আসলে একটা খাদ থেকেই দৌড়নো শুরু করেছিল।

এরপর,
সুবিশালের চেয়েও প্রকাণ্ড কোনো লাফ ভাবা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।


একবার একমুহূর্তের জন্য আমি
তারিণী মাঝির মত বলে উঠেছিলামআঃ!

তারপর সে ডুবে গেলে আমার
গোলাপী রঙের ইউনিকর্ণের কথা মনে পড়ে,
যার তিনটে শিং।
আমার মনে পড়ে গ্রিলে আটকে যাওয়া
পায়রার ডানা থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত,
আর তাকে বাঁচাতে চাওয়ার যন্ত্রণার কথা।
আমার মনে পড়ে মরে যাওয়া মাছেদের কথা,
তার পাশে হেঁটে যাওয়া সাতজন
ভেলোসির‍্যাপ্টার থাকে না।

খালি গীটারের শব্দ শুনলেই

সাদা বেগুন পুড়ে কালো হয়ে যায়।


মন্তব্যসমূহ

vivaswan datta বলেছেন…
১ এবং ২ অসম্ভব ভালো লাগল। প্রতিটি কবিতাই সুন্দর। কিন্তু শুরুর দুটো... আহা!

জনপ্রিয় লেখা