রাজর্ষি মজুমদার


পিয়া কে দেশ 



তোমার নিজস্ব সবকিছু ছবি করে নেবো – সে ভেবেই তো ফেরা। শহর, তুমি এক অনন্ত যাত্রা। কীভাবে  প্রিয় সব রাগ সংগীত, প্রিয়া সব নারীকে খুঁজে আন?
আর কীই বা পড়ে থাকে – ‘পূজা’ তা তো তোমার কাছে আসার  নৈঃশব্দ, 
‘প্রসাদ’ এই নদী। 

আর আমি, সব ক্লান্তি ছেড়ে রেখে ধরে রাখছি বাঁশুরিয়ার মগ্ন ধ্যান। বাজনদারের এই মাতোয়ারা হয়ে আসা। 



সব রঙ শুষে নেবে বলে আজ তোমায় সাদায় দেখি। শেষ রাতেও কি বেহায়া পাখিটি ডেকেছিল কোথাও? ভাড়াবাড়ির সিঁড়িঘর, আধঘুমে থাকা বাঙ্গালীটোলার গলি শুনেছে মাঝখামাজে তোমার সেই আর্তি। 
“কোয়েলিয়া, ম্যত কর পুকার” 
সে যে কবিতা –
দুপুর হাওয়ার মধ্যে ভাঙের গুঁড়ো মাখানো এই মৌতাত – এক গান। 
আর বলি, এই একাদশীর নাম আমলকী, আজ রঙের নাম গুলাল। 
অকারণ চুপ থাকাও যে বিরহ। 

ঘাটের দীর্ঘ নেমে যাওয়া, 
চাই সব দ্বিধা ফেলে অসময়ে তুমি ফের গেয়ে ওঠ সেই আকুলতায়। 



‘আরতির পর ঠিক খুঁজে নেব’ এরকম স্তোকবাক্যে একা হয়ে আসি। 
যে রাত্রি শুধু অন্ধকার নয়, তৈজসরঙা ঢিমে আলোর ঝলক – তার কাছে বিষাদ জমা হয়। 
দেখি অচেনা যাত্রীদল, সারিবদ্ধ চলে যাচ্ছে ডুমজ্বলা হলুদ গলির দিকে। 

ছেলেটি প্রণাম করছে নদীতে। দেবী নাকি সেই জল – কার কাছে নত হয়ে আসা? 

তুমি কি শাড়িটি পেয়েছ; পছন্দ মতন রঙের বুননে? 
তবে এবার ফেরো।আস্বাদ, দৃশ্য, শব্দ, ঘ্রাণে ভারী হয়ে আসা এ আলাপ – দ্রুতলয়ে শেষ হোক। 



ডোমটি বলেছিল, যেদিন এই ঘাটে একটিও শব আসবেনা – সে হবে সৃষ্টির শেষ দিন। 
তার কানে মাকড়ি, গায়ে মলিন শাল – দৃষ্টি দেশী মদের কারণে ঈষৎ লাল হয়ে আছে। 
মৃত্যুহীন এক দেশের কথা ঘোরে, পাক খায় চিতার ধোঁওয়ায় – আগুনের কাছে সব স্মৃতি ম্লান হয়ে আসে। 
ঐ শূন্যতার কাছে বেলা পড়ে – আরতির তোড়জোড়, পারাপার ... 
যতক্ষণ ছিলেনা সেই অনুপস্থিতি এক লেখকের – উদাস হাওয়ার দেশ থেকে সে লিখতে এসেছে চিরকালের গান। 

তবে তুমি কি প্রকৃতি? সময়ের সম্ভবনা মৃত্যুর সাথেই এক এক করে শেষ হতে দেখে বুঝি – 
আমাদের নির্বাণের সব পথ মণিকর্নিকার দিকে চলে গেছে।  



তোমাকে তবে বলি ফাগুনের বৃষ্টির গল্প। পাল্লাটি খুলে দাও নদীর দিকের, জল আসুক, জেগে থাকি এই রাতটুকু। 
আজ তো তুমিও জেনে গেছ আষাঢ়ের মেঘটি বিরহ, আর শ্রাবণের মেঘ গান। অকালবৈশাখের সব মেঘ রুষে ওঠা বাড়ি ফেরতা ছেলে, ভীষণ গরমে খেলা বানচাল হয়ে গিয়েছে যাদের। 
যখন প্রতিটি পাতা নতুন, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় দখিনের হাওয়ারা, জঙ্গলের কিনারা লাল হয়ে থাকে শিমুল পলাশে – সেরকম এক দিনে মেঘেদের আনন্দ হল খুব, মিলনের ইচ্ছে জাগল মাটির সঙ্গে। 
তারা দলবেঁধে এল রাজার কাছে – কুঞ্জবনে। দীর্ঘ রমণে তৃপ্ত সেই রাজা তখন বাঁশী বাজাচ্ছিলেন উদোম গায়ে। তার দুচোখে পূর্ণতা, শরীর জুড়ে নীলপদ্মের লালিত্য জমে আছে। মেঘেদের আর্জি শুনেও তিনি অবিচল, বাজিয়ে চললেন। চরাচর সেই রসে বিভোর, বাতাসও স্তব্ধ - ছুঁয়ে গেল তার ঠোঁটগুলি। 
বাজনা শেষে আশ্বাসের ভঙ্গিমায় তিনি বললেন – যদি এরকম ফাল্গুন দিনে তৃপ্ত কোন পুরুষ সুরে সুরে তাদের ডেকে নেয়, কেবল তখনই তারা ঝরিয়ে দিতে পারবে তাদের সবটুকু আনন্দ - মাটির কাছে, এই বসন্তের বৃষ্টি হয়ে।  

মন্তব্যসমূহ

এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

জনপ্রিয় লেখা