হিমালয় জানা
পাখি ও পাথর
১
তোমার সময় শুরু হ’ল এই ভোরের বাতাসে
কেঁপে উঠে
ফড়িঙের
চোখে,নীল রঙে
তোমার সময় শুরু হ’ল এই সূর্যের কিরণে
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা হাতবোমার ভেতরে
লেখো প্রাণ-পণ
লেখো
তোমার সময়
অনন্তের মুঠোয় ছটফট
২
শব্দ আমি ছুঁড়ে দেব অন্ধকারে।
আর জ্বলে উঠবে আলো।
জলের মর্মরে খোলা ঠোঁটের ভেতর থেকে
বেরিয়ে এসে
আমার পিছু নিয়েছিল আনন্দ
পায়ের নীচে পিষে যাওয়া পাখনারসরক্ত থেকে উঠে এসে আবার
আমাকে তাড়া করেছে আনন্দ
সেই আমি প্রেতভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলাম দীর্ঘতম
মৃত্যুর ভেতরে ঢুকে ঘাপটি মেরে শুনছিলাম দিকে দিকে পাখি ও কূজন; আজ
শব্দ আমি ছুঁড়ে দেব অন্ধকারে
৩
প্রথম পঙ্ক্তির রাজা, সব আরম্ভের অধিপতি
তোমার রক্তের নীচে
ঝ’রে পড়ে পাতা
রৌদ্রের কিরণে খুলে যায়
সমস্ত জলের পাপড়ি,আজ কি চোখের কোণে
এল জন্মদিন
কত শতাব্দীর রক্ত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে পাথরে
তোমার হাতের কাজ পাখি
৪
মুছে দিলে শব্দগুলো, স্তব্ধতার ফুল,
পেছনে কী পড়ে থাকবে—
শূন্যতায় নখের আঁচড়
৫
দু-হাতে ধরার মতো কিছু একটা চাই, মনে হয়
সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজেছে
নক্ষত্র-হারানো অন্ধকারে
মানুষের ঘরবাড়ি,দড়িতে শুকোতে দিয়ে
ভুলে-যাওয়া জামা
দু-হাতে ধরার মতো কিছু একটা চাই: তাড়া-খাওয়া,
নির্জনতায় হু-হু কেঁপে ওঠা,এবড়ো-খেবড়ো,
হিংস্র ও করুণ
কিছু একটা চাই আজ দু-হাতে ধরার
৬
তোমার মুগ্ধতা নিয়ে আমি কোন্ নরকে দাঁড়াব?
যেখানে পায়ের নীচে স্বপ্নের হাঁ-মুখ
যেখানে স্বপ্নের নীচে পাঁকে-মাথা-গুঁজে-থাকা লোক
তার শ্বাসের বুদ্বুদ
উপচে-পড়া সুরাপাত্র শূন্যে তুলে ধ’রে
তোমার মুগ্ধতা আমি ভুলে যাব অনেক পাখিতে
৭
শেষ হবে
এই রোদ, সামান্য সকাল
বাতাসে পর্দার মৃদু উড়ে যাওয়া: দৃষ্টির দ্রাঘিমা
ছেড়ে-আসা বিছানায় চাদরের এলোমেলো ঢেউ
সিলিং ফ্যানের শব্দ, রোমের কাঁপন
আঙুলের শান্ত ওঠা-পড়া
কবিতার শ্রম
৮
তোমার হাতে ফিরে এলাম ছোট্ট একটা পোকার মতো,
অবিশ্বাসী, ত্রস্ত সবুজ
এমন ভেবে চক্ষু বুজি:
বৃষ্টি থেকে বৃষ্টি নামে
জল থেকে জল গড়ায় আবার
কাঠবেড়ালি পার হয়ে যায় রামধনুরঙ
তোমার হাতে ফিরে আসার দিন কি সুদূরপরাহত
ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যা নামে
এবড়ো-খেবড়ো ঘাসের ওপর
৯
স্বপ্নের ভেতরে যত কবিতা লিখেছি কিন্তু সঙ্গে নিয়ে বেরোতে পারিনি,
সে-সব একত্র করলে একটা পাণ্ডুলিপি হয়
একদিন জাগ্রত, তাই, ঘুমন্ত আমার মধ্যে ঢুকে প’ড়ে
খুঁজে দেখব, ভাবি
টেবিলের নীচে, জলস্রোতে—
কেবল একটাই দ্বিধা, এমনও তো হতে পারে, আমি নয়, হয়তো সেই
কবিতাগুলোই স্বপ্নে আমাকে দেখেছে
১০
পিঁপড়ের প্রাণের কথা লেখো তুমি
লিখে রাখো ঘাসেরও জীবন
লেখো সূর্যালোকে দীপ্ত জীবকণাগুলি
কতো দূর ধমনীজটিল
সময় পেরিয়ে এই প্রাণ এসে জাগাল তোমাকে
পথে সে নিজের বার্তা হারিয়ে ফেলেছে একটি হতভম্ব কবিতার মতো
মন্তব্যসমূহ
এই হিমালয়কে জানা আমাদের ফুরোবে না!