স্রোতস্বিনী চট্টোপাধ্যায়
রক্ষণভাগ
১
টানা রাস্তার মতো বিচ্ছেদ
সেই ধীরে হেঁটে যাওয়া কাছিমের গল্পের মতো
একদিন ঠিক ফিরে আসে
জিতে গেছে, সফল দূরত্ব
অনাড়ম্বর স্মৃতি ফলক পেরিয়ে
কোথাও জিরিয়ে নেয় নিই দু দন্ড
তার গন্তব্য সেই আমারই ঘর,
তার গন্তব্য আমার
ভাতের থালার এক পাশে
২
জ্বরের ঘোরে দেখতে পাই
সাপের মত পেঁচিয়ে গেছে সমস্ত গলি ঘুঁজি
শ্রাবণ মাস এলে
এখন গভীর এক সুড়ঙ্গপথের দিকে হেঁটে চলা
মনে পড়ে
শেষ বর্ষার কানাকানি
সে যেন অন্ধ নাগের মণির মতো, উজ্জ্বল
গোপন অস্ত্রে
সেই যেন প্রথম বয়ে আনা যুপকাষ্ঠে,
জবা বেলপাতার মালায়
ভরপুর বলি-উদযাপন
৩
হাত রাখো
দু হাতে ছুঁয়ে দাও দেহ চরাচর
দেখো কিভাবে তেতে পুড়ে উঠছে কপাল
ওইখানে নিয়তি লেখা, স্থির
প্রাজ্ঞ তোমার শিরা উপশিরা
দহনের ওপর যেন
দু এক ফোঁটা স্বর্গসুখ
ওই ছোঁয়ায় বুঝি
এক্ষুনি বদলে যাবে ঘর, ভবিষ্যৎ
৪
সমস্ত শ্রী মুছে গেছে
আজ লক্ষ্মী বিহীন এই ঘরে ঢুকলে
প্রাণ টলে যায়
শ্বেত শুভ্র কিছুই নেই কোনোখানে
এই বুঝি স্বাভাবিক,
মনে সাংসারিক ভয়
দিকদিশাহীন মোহ শুধু এ তল্লাটে
দু একবার এসে ঘুরে গেছে
আহা রে সে ঘূর্নি!
মঙ্গল ঘট ভেঙে দেয় খানখান
ছেঁড়া ক্যালেন্ডার কাঁপতে থাকে
তারিখের গায়ে কালি পড়ে গেছে খুব
দেওয়ালে সিঁদুরে কড়িতে আঁকা স্বস্তিক,
ভাঙা চাঁদের আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে
৫
রাত যত বাড়ে
ঘুমের প্রকোপ তত কমে আসে
আয়নার সামনে এসে দাঁড়াই
গোটা পাড়া তখন নিশুতি বিভোরে
আমি একা জেগে আছি
ঘরের ভিতর বেজে যায়
অনাহুত রামদাসী মলহার
এখন স্মৃতি ততো বিষাদগ্রস্ত নয়
চেয়ে থাকি নিজের দিকে
অসর্তক এই শীতলতার আকর্ষণ প্রবল
এইখানে সহজীবনের প্রেম
এইখানে মুহূর্তের মুখরতা
ক্রমে মূক হয়ে আসে,
ধীরে, আচম্বিতে






মন্তব্যসমূহ