শুভদীপ চক্রবর্ত্তী



আঙ্গিক ব্লগ, জুন ২০১৮

অসুখ


ডিমেনশিয়া


শৈশবের ভিতর ফিরে এলে,
সবকিছু মনোরম লাগে কেমন --
নির্বাসন নয়, বরং ব্যাকুলতা পেয়ে বসে।
ওই যে ঝোপের আড়াল, ওর নাম পুটুস;
ওই যে চিঠি থেকে ঝরে পড়ছে অক্ষর,
তার গন্ধ শিউলি।
… এভাবে চেনা নাম, চেনা মুখের মাঝে হাঁটা হয় আলপথ ধরে;
ঝুরো ঝুরো মাটি গল্পে বুঁদ –

অথচ যে বালিকার মুখ মনে করতে পারিনা আর,
তার নাম বুকে করেই এই শৈশব হাতড়ে বেড়ানো –
হাতড়ে বেড়ানো অকাল বোধন; দধিমঙ্গল,
হঠাৎ দুপুরে পালাতে চাওয়া, সেসব গায়ে-হলুদ ...



অ্যালঝাইমার'স


সুন্দরের ছায়া পড়েনা কখনো,
এতটাই স্বচ্ছ।
যেমন এই গ্রাম-মাঠ-আল-পুকুর,
পুকুরে ফুটে থাকা পদ্ম, শালুক –
কী তিরতির কেঁপে যায় এখনো, আলো ঘেরা বাতাসে !

যেমন কেঁপেছিল সেও –
যখন সে বালিকা; হঠাৎই চোখে চোখ … না তো !
যে সকালে রোদ পড়ে, তাকে খুব স্নিগ্ধ দেখাতো।



ডিপ্রেশান


কতকাল দুঃখের ছবি নিয়ে জেগে আছে,
চোখের কালো ছায়া –

যেমন ঠিকানা না জানলে, চিঠির ভূমিকা থাকেনা কোনও,
তেমনই চোখ জুড়ে কালো ছায়া কড়কড় করে এলেও –
বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ, মেলেনা কোনও কোনও দিনে …

এভাবেই এক আশ্চর্য যাদুর ভিতর এই পৃথিবীতে
আলো মেখে, ছায়া মেখে, ধুলো মেখে সারা গায়ে
আমাদের শিশুরা ক্রমশই
বড় হয়ে যেতে থাকে …

আর সাবালক একটা পৃথিবী শুধু যুদ্ধ করতে করতে করতে
শিশুর থেকেও কেমন অবোধ হয়ে যায় রোজ।



হ্যালুশিনেশান


ঘরে ফেরার পর তোমার রহস্যময় হাসিমুখ
অস্বস্তি জাগিয়ে তোলে বড়।
জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি দূরের মাঠ,
নিরন্তর সুষমা জেগে আছে প্রকৃতির ভিতর –
মনে হয়, শীত-গ্রীষ্মের পাখিরা তোমার খবর নিয়ে আসছে।
… অথচ কোন অনন্ত বিষাদে তারপরেও
তোমার চোখের নীচে কালো ছায়া, ঘন হয়ে আসে আরও।

এসব দিনে কাছে নিতে ইচ্ছা হয়; মুখ তুলে
বলতে ইচ্ছা হয় ফিসফিসে –
হাঁটতে হাঁটতে আমরা একদিন ঠিক পার হয়ে যাবো
এই ঢালু পথ, মাঠ, নদী … ঠিক –
… ছবি কখনো পুরনো হয়না যেখানে; মাঠের ঘাসে
হলুদ ছড়িয়ে দেয় সূর্য, আর –
তোমার আলতা পা’য়ে লুটোপুটি খায় সমস্ত সুন্দর …

… মনসাকে পুজো দেয়, চাঁদ বণিক।



ভার্টিগো


সোনাঝুরি জ্যোৎস্না মাখলে খুব,
তোমাকে বনদেবীর মতো মনে হয় –
স্কুল ছুটির ঢংঢং বাজে কানে।
তোমার আশ্চর্য সুবাস শরীর জুড়ে
ঘোড়া ছুটিয়ে দিলে, মনে হয়,
তোমাকে আমি উপহার দিতে পারি
গোটা একটা চন্দনের বন …

অথচ তুমি সেসব তাকিয়েও দ্যাখোনি কখনও;
বরং সাদা পাতায় ছবি এঁকেছো; ফুটিয়ে তুলেছো তারা।
বলেছো, আরও কত উপরে ওড়াবে ঘুড়ি,
ওড়াও তবে।

খোঁজ রাখোনি, ঘুড়ি উপরে উঠেছে যত,
লাটাই থেকে উপড়ে যাবার ভয়ে, ভিতর ভিতর নুইয়ে গেছে ততই।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা