দেবব্রত কর বিশ্বাস



গেরুয়া, লাল, নীল-সাদা এবং আধুনিকতা


হাজার একটা খারাপ কাজের মধ্যে সিপিএম যে সবচেয়ে ভালো কাজ করেছিল, তা হল এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় না দেওয়া। এই যে বিজেপি নামক কুৎসিত রাজনৈতিক দলটি আমাদের রাজ্যে থাবা বসিয়েছে, তার মূল উৎস কিন্তু রাজ্যে উত্তরোত্তর ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা 'হিন্দুত্ববাদী' সংগঠন। হিন্দুত্ববাদী কথাটাকে কোটেশন মার্কের মধ্যে রাখার কারণ বিজেপিচর্চিত এই হিন্দুত্বর সঙ্গে প্রকৃত হিন্দুত্বর আকাশপাতাল তফাৎ। এখন প্রশ্ন উঠবে, প্রকৃত হিন্দুত্ব কী? তাহলে পড়াশোনা করতে হবে। মূলত উপনিষদ গুলি পড়ে দেখতে হবে। যাই হোক, সিপিএম আমলে যখনই এই হিন্দুত্ববাদী গোঁড়ামি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে তখনই সিপিএমের বহুচর্চিত সংগঠন নানা কৌশলে তা ভেঙে দিয়েছে। এটা একটা বিরাট সাফল্য। তৃণমূল সেটা পারেনি। পারছেনা। তাই এই নীতিপুলিশদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। মেট্রোর ঘটনা, টেবিল টেনিস ক্লাবের ঘটনা, মেয়েদের সিগারেট খাওয়া নিয়ে নিগ্রহের ঘটনা তার প্রমাণ। এখন কথা হচ্ছে এই গোঁড়ামি কি বিজেপি নিয়ে এসেছে? নাঃ। সেটাও নয়। এটা বরাবর ছিল। এই গোঁড়ামিকে আমি অস্বাভাবিক বলবো না। একজন মানুষ যেভাবে বেড়ে ওঠে সেই অনুষঙ্গগুলো তার চরিত্রে মিশে যায়। বদল আসতে সময় লাগে। সেটা আমাদের বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। বেশিরভাগ মানুষই পরিবর্তিত সময়ের ধ্যানধারণাকে সহজে মেনে নিতে পারেননা। তাই সংঘাত লাগে এক প্রজন্মের সঙ্গে আরেক প্রজন্মের। তাই বলে কি আমরা তাদের 'বুড়ো ভাম', 'আলুদাদু' বলে সম্বোধন করব? এতটা অসহিষ্ণু হয়ে পড়া শিক্ষিত মানুষকে মানায় না। আমি এমন অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষকে দেখেছি যারা মানসিকতায় অনেক আধুনিক। আবার অনেক অল্পবয়সী মানুষ দেখেছি যারা ১০০ বছর পিছিয়ে আছেন। বিজেপি সেই পিছিয়ে থাকায় হাওয়া দিয়ে নিজেদের পালে হাওয়া বইয়ে দিতে চাইছে। কতটা সফল হবে সেটা সময় বলবে। তবে সফল নাহলেই আমাদের মঙ্গল। এই মুহূর্তে বিজেপির চেয়ে ক্ষতিকর আর কেউ নেই। আমার বিশ্বাস, সেই পুরনো সিপিএম থাকলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না।

এই কথাগুলো লিখতে লিখতে আমার মনে পড়ে গেল তসলিমা নাসরিনের কথা। সিপিএম আমলে মুসলিম মৌলবাদের চাপে তসলিমার বই নিষিদ্ধ হয়েছিল। সেই মৌলবাদের চাপেই আমাদের এই তথাকথিত প্রগতিশীল কলকাতা শহর তসলিমাকে স্থায়ী ঠিকানা দিতে পারেনি। হিন্দু গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় না দিলেও মুসলিম গোঁড়ামির কাছে বশ্যতা মেনেছিল সিপিএম। তাহলে তাদেরকেই বা কীভাবে নিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের তকমা দেবো? তসলিমার সময়ে বাঙালির হাতে ফেসবুক ছিল না, থাকলে কী হতো এবং কী হতো না, সেটা ভাবলে কূলকিনারা পাই না।

এমন অবস্থায়, কোনও রাজনৈতিক দলের উপরেই আমার বিশ্বাস থাকে না। আর আমার চোখের সামনে ইভিএমে জ্বলজ্বল করতে থাকে একটাই শব্দ- নোটা! দুঃখের বিষয় নোটার কোনও সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা