তন্ময় ধর



নববর্ষ ১৪২৫- ১২



পঞ্চ বাণ
     


লাল পদ্ম

রক্তপাতের দূরত্বে আর একটা শব্দ
আমি চিনতে না পেরে বোকার মতো হাসছি
জ্যামিতিক সূত্র মেনে ছায়া ফেলছি তোমার রান্নায়

মশলা থেকে ভুল কান্নার আলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে 
ভ্রূণবিন্দুতে ভেসে থাকা একটা সংসারে 
খৃষ্টপূর্ব এক প্রতারণার পরাগ

আমি আস্তাবলের ধর্মে পা ফেলছি
অশ্বক্লান্ত মাংসের পাশে মাতৃহীন মেয়ের ভুল ধারণায়
আবার খালি পেটে শব্দোত্তর

আমি উত্তর দিচ্ছি না
সফটওয়্যারে রক্তের মতো ভিজে উঠছে শব্দের থলি ও হিরণ্যগর্ভ
প্রভাত-তরল জ্যোতির মতো একটা খিদেয়



অশোক

ব্রহ্মাণ্ডের প্রথম আলোর ভিতর নড়ছে একটা পুতুল
ল্যাটেরাইটের ছাঁচ থেকে শিল্পী আত্মহত্যা করছেন বারবার
ফুলের সংলাপ হারিয়ে গেছে

বাকি বসন্তোৎসব থেকে পারদের অন্যস্থানে
রঙিন উত্তাপে অভিনয় করছে মৃত্যুর ভারী মেক-আপ
নকল নখের চিহ্ন

সুগন্ধী দুধ-ধান থেকে আমিই তোমার বৃত্ত
মৃত শিশুর মতো শ্যামবর্ণ ভ্রমণে
আমিই তোমার মায়া এবং মাংসাশী ন্যারেটিভ

বহুযুগের দূরত্বে এইসব ঘরবাড়ি
সাপলুডো থেকে কথা নামতে নামতে
রক্তে ঢুকে পড়ে পরবর্তী ঈশ্বরের জিভ



আম্রমুকুল

চ্যালকোলিথ মানুষের পায়ের হাড়ে আমাকে লিখে রেখেছো তুমি। তলতল করছে ঐশ্বরিক মাংসের কাহিনি। পাথরের মতো কিছুটা পাগল ছায়া ফেলছে আমাদের খেলা। শিকারের রঙ থেকে তীব্র হাড় খসে পড়ছে অভিনয়ের প্রুফ রিডিংয়ে। বরফের ভুল বানান থেকে আমাদের শীতলতার ঝুঁকি নিচ্ছেন ঈশ্বর। মাংসের নগ্নতা থেকে কেটে কেটে শূন্যতার ভিতর শব্দ ফেলে রাখছো তুমি

অসমাপ্ত ঈশ্বরের ফলাফলে আমরা গুছিয়ে রাখছি আগুন। উর্ণনাভ-দোষে সে কাহিনি গোটা একটা জন্মদোষ বুনে রাখছে। শস্যচক্র ও কালপুরুষের মাঝখানে আমাদের শরীরাংশ বহুভাগ জল হয়ে যাচ্ছে। ওলটপালট হয়ে যাওয়া আমাদের খিদে থেকে কাঁটা বেছে উড়ে যাচ্ছে অগুনতি পাখি

কাঁটায় বিঁধে থাকা শেষ রক্তমাংস থেকে আমরা মেরামত করে নিচ্ছি কাহিনি। প্রাগৈতিহাসিক সমস্ত ধাতুবিদ্যার ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়া এক ছাত্রীর নোটবুক থেকে তিরতির করে কেঁপে ওঠা চামড়া ছাড়িয়ে নিচ্ছি আমি। ফার্নেসের গাঢ় লাল রঙে তৈরি হচ্ছে মতান্তর



নবমল্লিকা 

গুহার কাছে একধাপ সূর্যে ।তুমিই কথার উত্তর। ছিন্ন শুশুক-কাঠ-জরাগাছ-জীবাশ্ম  সব কিছুর ওপর আবার তুমি বরফের মতো ফেলে রেখেছো সম্পর্কটা। জিওলজিক্যালি দীর্ঘতম যৌথ শরীরে হিসেব ভুল হয়। 

কশেরুকার ভিতর অন্ধকারে চুঁইয়ে পড়ছে সাত হাজার বছর। ঘুমের রঙে মিথ্যেকথার মতো ব্যবহৃত হচ্ছে আমাদের শরীরাংশ। পায়ের শব্দের আড়াল থেকে গতি বাড়ছে হেমন্তের মাঠের খড়কুটো পোড়া ভুষোগন্ধের। শিকার ও মাংস থেকে অস্পষ্টতম রাত্রি ঢুকে পড়ছে তোমার চ্যালকোলিথিক ডিশে

সংসারের খুব পুরনো ম্যারিনেটে জেল্লা আসছে মাংসে। দই-হিং-নুন থেকে হিসেবের খাতাটা হারিয়ে ফেলছি আমি। আহারান্তে হাত ধুতে গিয়ে শীতলতম নদীর ঢাল বেয়ে দ্রুত ছোট হয়ে যাচ্ছে আমাদের ছায়া 



নীল পদ্ম

অস্ত্রের নিয়ম আমার পাঁজর থেকে বের করে নিচ্ছে তোমার মৃত্যু। বেশী করে জল খেয়ে শিশুর দিকে খেলছো তুমি। কালপুরুষের দৃশ্যত কুকুর পেরিয়ে কাঠকয়লা হয়ে শুয়ে থাকছে আমাদের সাংসারিক খরচ। সত্যিই কি ধানদুখী অকালবৃষ্টিতে আমাকে হাঁটতে হবে?

তোমার রঙের বিষাদে আমি বিশ্রাম নিচ্ছি। প্রাচীন হিমাঙ্কের শব্দ ও নাভি থেকে তোমাকে লুকোনো ছবির কথা বলেই যাচ্ছি । সাংসারিক টান থেকে লাফ দিচ্ছে হরিণশিশুর অন্ধকার। মৃত পাখির কঙ্কালে আর সাপের খোলসে আর শীত কই?
সেই কমলা আলোর অনেক নীচে নদীমাতৃক স্তন্যে নির্ধারিত শিল্পীর মতো ঘুমিয়ে আছো তুমি। তোমার স্মৃতির নখ কাটতে কাটতে গল্পের প্রুফে ভুল শব্দের আঠালো কুয়াশা ঢুকে যাচ্ছে। ভোরের অগুনতি পাখিতে আটকে পড়ছে আমাদের সম্পর্কটা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা