ঔরশীষ ঘোষ


অলিভিয়া





অলিভিয়া,
যার সাথে দেখা হয়

যেদিন দেখা হয়না, 
সেদিন আমার বয়স বেড়ে যায়
সেদিন সকল রাস্তাই নিয়ে আসে এক অচেনা বাড়ির কাছে 
যে বাড়ির ভিতর তার অবয়ব 
মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ

বাতাসে জলের পরিমাণ বেড়ে যায় তখন



তুমি দুপুরের পেলব আলো 
এলিয়ে দাও আমার বিছানায় 
আমি শীতঘুমে ডুবে যেতে থাকি 
এই শরীরে ঠাঁই নেয় অপূর্ব বৈরাগ্য 

তাই আজকাল ছায়া দেখে ভয় পাই না 
কত দৃশ্য ঘটে যায় অনায়াসে
সূর্য অস্ত যায়
সেসময় ঘরের ভিতর উড়ে আসে দু একটি পালক 
আমি সঞ্চয় করে রাখি



যেভাবে মানুষ ঈশ্বরকে ডাকে প্রতিদিন
সেইভাবেই ডেকেছি তোমাকে 
তারপর দোরগোড়ায় এসে কি বলবো ভুলে গিয়ে
অন্ধকার সিঁড়ির কোণায় লুকিয়ে দেখেছি 
একটি দরজা ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে 

সেই ঘরে, স্থির হয়ে থাকে ইতিহাসের গতি 

আমি ভাবি 
ঘুমন্ত সকালে সেখানে আমিষ গন্ধ লেগে থাকে কি না ! 

বারান্দার জাফরি দিয়ে আলো এসে
মেঝের ওপর নকশা পেতে রাখে
দরজার সামনে 
এখন দু দন্ড জিরিয়ে নেয় আমার সমস্ত কোলাহল

৪।

শীতের বিকেল কাটে আধো-ঘুমে
যে গাছ স্পন্দন হারিয়ে ফেলে একটি ফুলের জন্ম দিয়ে
আমি কি এখন ক্রমশ সেই গাছের আকার নিচ্ছি?

এই ঐশী মায়ায় জরাজীর্ণ হয়ে 
এসো অলিভিয়া 
তোমায় আত্মস্ত করি
এই রাত আরও কুহক হয়ে উঠুক

আমি নৈস্বর্গিক অন্ধকারের ভিতর 
তোমার অবয়ব স্ফীত হয়ে যেতে দেখি 
এখন হীমেল বাতাস শরীর ছুঁয়ে গেলে 
বীতশোকে স্তব্ধ হয়ে যায় এই পৃথিবী 
দূরে একটি অপ্রতিভ নক্ষত্র অফুরান উজ্জ্বল 

৫।

কয়েক যুগ কেটে যাবে 
নিজেদের সাথেই গল্প করে
তারপর একদিন এই জল থই থই গলি ছেড়ে
ভাগাভাগি হয়ে যাওয়া বিছানা পরিপাটি করে, 
মশলা পাতি, ফুলদানি, আরাম কেদারা ঢেকে রেখে
কোনও এক হাঁ করা ফুলের ভিতর
আমরা ঢুকে যাব 

সেইদিন আমার শরীর থেকে স্বপ্নের নির্যাস গড়িয়ে পড়বে 
গভীরতর অসুখে আক্রান্ত হয়ে 
জেগে বসে থাকব তোমার জন্য
আমাদের আয়ুষ্কাল 
একটি শূন্যগর্ভের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে

৬।

কাচপোকাদের দলে মিশে, নিষিদ্ধ আগুনের দিকে
একদিন উড়ে গেছি
এখন ভয়ার্ত পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে গেলে
অন্ধকার শহরের দিকে চেয়ে থাকি সারারাত
বেখায়ালি হাওয়া আছড়ে পড়ে আমার ওপর 
আমি দুলতে দুলতে ধ্বস্ত হই 
তারপর বুঝতে পারি,  
কত শতক ধরে 
আমি মৃত্যুর অতীত কোনও স্বপ্নে ডুবে গেছি

৭।

যমকালো অন্ধকার 
একা জেগে আছি 
শুনতে পাচ্ছি 
অনতিদূরে কারা যেন হরিধ্বনি দিচ্ছে 

তুমি কি এই কোলাহলে আমার কথা শুনতে পাও অলিভিয়া?

আমি ধীবরের জালের ভিতর আটকে পড়া একটি মাছ 
কিংবা যে লাল ঘুড়িটি আকাশে 
                 পাক খেতে খেতে নেমে আসছে নীচে 
আমি তারই রক্ষক

তুমি চিনতে পারনি বলে
আমি রাত্রিকালে ডানা মেলে দিই 
স্বাতীনক্ষত্রের জল বুকে নিয়ে উড়তে থাকি
যতক্ষন না আমার বয়স বেড়ে যায় পুরনো গানের মতো

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা