তাপস বিশ্বাস

তাপস বিশ্বাসের ছ'টি কবিতা 



 অলিখিতের বুদবুদ  

ঘোষিত হচ্ছে জল। কিছুটা মেঘ জারি হোক।
এই বলে, এসো বাকি অর্ধেক অলিখিতের বুদবুদ খেলি।
জঙ্গল সে এক। চুষেছে বর্ষার নামধাম। 
বাতাস যেন মৃত্যুশিয়রে তোমার,
কষিয়েছে আকাশনিষেধের থাপ্পড়।
দৃশ্যের সম্বল রাখে না কেউ যতখানি প্রয়োজনীয় জল।
কোনো শ্রুতিআয়োজক পিপাসার চেয়ে বড় 
ধরে না দীর্ঘ জিরাফ!  

পাতার লাফে বিরহ জরুরি নয়,
তবু এই জঙ্গল থেকে পৃথক করেছে তোমায় 
বৃষ্টি চেনার উপায়। 

        
গাছ চিনবে বলে 

ছায়া এক অতিপ্রিয় সম্বোধন। 
ইশারা ডাকে নরম তার উজ্জ্বল মলাটখানি। 
শিকড়ের ফর্সা হাতখানি নেমে যায়। 
যেন মাটি ভেবে নিয়েছে সেই অবাক কেরিয়ার! 
এই মোহময়ে এসে ঢুকে যায় অতিরিক্ত ঝড়।
বাতাস শেষ না করে ভাঙে প্রিয় বিশেষণ। 
বিস্ময়পাতা! 
তবু দরকারমত বিরাজ শেখেনি কেন ও ?   

‘মৃত্যু’ তো দুটি অক্ষর বড়জোর। 
গাছ চিনবে বলে কবেই ঝরাবর্ণ পেরিয়ে গ্যাছে সবাই! 
            


বিকার  

সমুদ্ররঙে তলিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও ব্যবহার নেই।
ব্রাশে গুলিয়ে গিয়েছে নুন আর বালির কুলকুচি দাগ।
বহুব্যবহারে গুছিয়ে তুলছো তুমি সাবলীল। 
রোদে থেকে স্থিরচিত্রে শুকোচ্ছে জলে নামার প্রান্ত। 
ভেতরে অভিনীত হচ্ছ যেন ভূমিস্পর্শ।

একটা অতলের ধারণায় আরও নিচু হতে হতে 
আমরা আমাদের ভেতরে পেরিয়ে আসছি জলরং 
আর ভ্রমণের ঢাকা স্বভাবের মতো স্নানাঞ্চলে 
আঁকা থাকছে গার্হস্থ্যঢেউ, অসমাপ্তের বিকার। 
              


ছুতো 

তারপর নদীতে ঘন ভাসা চুবিয়ে দেখেছি 
জঙ্ঘা রঙের রাত পেরিয়ে যাচ্ছে আমাদের সেতুরাগ।
অন্ধকারে আঁটে না পা। 
জলমগ্নতা পুষেছে নদীসম্মোহনের খাঁজ।
নখের আকুতিঘাটে নৌকা এসে থামে। 
ধ্রুব পা তুলে সিঁথির শব্দ হেঁটে যায়।
তখনও প্রকাশ্যের গানে আড়ালের ধ্বনি তুলি!
তখনও হিসেবের যোনি শোনেনি
বুকের উপর ঝুঁকে থাকা নদীমেহনসুর 
আসলে ঘোরানো সিঁড়ি—
নোনাধরা। নেমে যেতে চাওয়ার আর্তনাদ।
অতএব, 
অকূটের এক প্রস্তুতিবিহীন সেতুকে কোনোদিন
অথবা একদিন আনমনাপারের ছুতো দিয়ে আসি। 



অস্ফুটকে আমি  

দুপুর ছুটছে আগে। অস্ফুটকে আমি, পেছন পেছন রোদে নিয়ে যাই।
জানালার কাচে ফুটছে, টের পাই, ছেঁড়া বসন্ত লাগা বিকেল।
ফেরার পথকে একা এভাবে ক্রমাগতের ঘষাবাগান হতে দেখি।
তার মুখ পড়ে নির্ভার স্মৃতিভাষ্যের দাগ। নিচে আমি তারও ফুল পড়ি।
ভাবি যে কোনও বিকেলফুলে প্রথম এ দশারই তীব্রতা ওঠে।
রোদ খেয়ে নেয় জ্যান্ত পরাগ। মধু পায় পথের রাগ। 
সম্মত লাফায়, যেন অবিকল খিদে!

এরপর বাতাস মুছে দেয় সিঁড়ি। অর্ধেক — সেও এক অতিদীর্ঘ খাদ!   

ভাবতে ভাবতে কখন সুরভির তাড়না আসে। চেনা স্টেশন। 
নিভৃতের নামা রেখে চলে যায় ট্রেনের ঝুমকোবয়স।
                  


পাখিদের ব্যক্তিগত শব 

এখন ভূমিকা থেকে খসে পড়ছে পালক।
একটা বিস্মৃতির ডানা মৃত্যুর আকার ভেঙে এনে 
অক্ষম স্বরথলির উপর ছড়িয়ে দিচ্ছে ফালতু নুন।
রোদ ছেঁড়া পাখিমুদ্রার কাছে বিকেলের মৌনতা ছাড়া 
বিকল্প কিছু থাকে না আর।
এখন ভাবি, পাখিদের সব সাম্প্রতিক কি যথাযথ হয়?
সম্ভবনার দাগে আকাশ মুছে গেলে সবাক অন্নবোধের পাশে 
পড়ে থাকে পাখিদের ব্যক্তিগত শব।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা