চিরঞ্জিৎ সামন্ত

চিরঞ্জিৎ সামন্ত'র পাঁচটি কবিতা




সাজ

অলংকার ঝেড়ে ফেলি রোজ।
খাতা খুলে বসলেই তবুও

সাজাতে ইচ্ছে করে, তাকে

যেরকম বাতুলতাহীন শীতদুপুরের রোদটুকু,
সাজুগুজু না করেই বেশ, পড়ে আছে পড়ার রোয়াকে।
তুমি তাকে খুঁজে নিয়ে বসো,তাকে খোঁজা নিয়ে হয়রানি...

সে তোমার ওড়নাকে ছুঁলে
না চেয়েও সেজে ওঠে জানি


মায়া

চালুনিতে শব্দ ঝেড়ে ফেলি
বুজে আসছে চালুনির ফুটো
মায়া বাড়ছে মায়া বাড়ছে মায়া

যেরকম ফেলে দিতে হয়।
ঘুন ধরা ভাঙা খাটটির
পরিত্যক্ত পায়া

যেখানে নখের দাগে নাম লিখেছিলে
কাঁচা লেখা, বলেছিলে :ভালো

বয়সের সাথে মুখ বুজে বসে থাকা চালুনিটি
আমাকে ডোবালো।

ঘুম

ঘুম আসতো না তোমার
ঘুম আসতো না

একটা সময় দিনের পর দিন
মাসের পর মাস তোমার ঘুম আসতো না

কথা বলতে বলতে চোখ জড়িয়ে আসত
ঢুলে পড়তাম আমি
তোমার খারাপ লাগত।রেগে যেতে মনে মনে। জানি
মুখে বলতে,শুয়ে পড়। আসি।

অথচ এখন তুমি চোখ বোজ কাঁটায় কাঁটায়,
বদলেছে আমার অভ্যাসই

হেঁটে হেঁটে বাইরে যাই,পথে নামি,
সেই সব নিদ্রাহীন পথে,

থম মেরে বসে থাকে শত শত ক্লান্ত নিরুপায়
ক্রীতদাস আর ক্রীতদাসী


গুয়াশ

সকলে অবাক হয়ে দেখেছে তোমাকে
মেধাবী চোখের নিচে কাজলের জমি
গুয়াশের ভেতরে যে সাদা মিশে থাকে

আমার থাকাও সেরকমই

সকলে দেখেছে রঙ, রঙের প্রকাশ
চিনেছে আলোতে তাকে যে আলোর পাশে
একা একা রাত জাগে কিছু ক্যানভাস

সাদা মেশে রঙিন গুয়াশে

স্বচ্ছতা ফিকে হলে, গাঢ় হয় হয় টান
নতুন আকার নিল চেনা সাজঘর
গোলাপি ঠোঁটের ফোঁটা,ছবির বাগান

রঙ শুলো,রঙের ওপর

সকলে যেভাবে দেখে,সাহসী তোমাকে
বিপদের বাঁকে চলা রেখাটির টানে...
রেখার আড়ালে যত জন্মদাগ থাকে

আমার বসতি সেইখানে

আরেকটা  দেশ

আলিওনুস্কা বোন
তার ইভানুস্কা ভাই

তাদের সাথে ওই...
আমিও হেঁটে যাই

ধুধু বরফ আর
পাইন গাছ। সারি

ধোঁয়া উঠছে দূরে
ভাঙা কাঠের বাড়ি

ফুরোন শৈশব,
কুড়োন অবশেষ

একটা দেশ, দূরে...
আরেকখানা দেশ

জুড়ে যাচ্ছে ওই।
ভেঙে যাওয়ার পরও

ছোটবেলার তিল
ঈষৎ জড়সড়

ডাইনী পাল্টায়
নিশান তবু লাল

দাড়ির ঘাসে ঢাকা
নরম, চেনা গাল

চোখের কোনে কালি
বয়স হল তার

সীমান্তকে ছুঁয়ে
বন্ধুপারাপার

ইভানুস্কা ভাই
আর আলিওনুস্কা বোন

দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে
ভেঙে দিচ্ছে মন

ওরা,
জুড়ে দিচ্ছে মন

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা