সুপ্রিয় মিত্র
একচ্ছত্র
১
মানুষটি একাধারে ধর্ষিত ও ধর্ষক। আমি অপমানে বোবা একজন কবিতা লিখিয়ের কথা বলছি, যার হাতে এক্ষুণি একটি পেন ও খাতা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২
দুঃখ পেয়োনা। একটি গাছ ও পাখির বিবাহ হলে যা হবার, তা ই হয়েছে। পাখি বাসা বদলায়। স্বভাব। দোষ নিও না। গাছ তো কখনও ডাল ফাঁক করে ফেলে দেয়নি বাসা। পাখির অসহায়তা নিয়ে কথা উঠলে, সে তোমার ভুল নিজের করে নেবে, ব’লে চলে গেছে।
৩
‘পৃথিবী গোল, দুটি বিন্দু সরে যেতে যেতে আবার তারা নিকটবর্তী হয়’। পৃথিবী যতটা গোল, ততটা শহর নয়। পিনকোডের প্রথম তিনটে সংখ্যা আমরা একই লিখছি সেই চিঠি থেকে। হাঁটতে হাঁটতে মনে নেই, কবে শহরকেও চেপ্টে দিয়েছি রাস্তায়। আমাদের আর দেখা হয় না।
৪
শুশ্রূষা-কাঙাল কিছু মানুষ বললেন মাধুকরী। কিশোর-কিশোরী বলল দেহতত্ত্ব দেহতত্ত্ব। ভিখিরি বলল কতদিন খাইনি। বর্ণান্ধ বললেন কালশিটে। কলামন্দির থেকে ভেসে এল - আমায় নিংড়ে নিন বন্ধুরা…. সন্ন্যাসী চোখ বুজে বললেন - মানুষের ঘুম কমে গেছে।
৫
অপেক্ষা করেছিলাম, - এর কোনও প্রমাণ কাছে নেই। যেমন নেই কোনও সাউন্ডপ্রুফ চপ্পল। আমি যে ছিলাম,- তার দলিলগুলো আস্তে আস্তে পুড়িয়ে ফেলছি, যেমনভাবে গরিবের বৌ ঘুঁটে জ্বালিয়ে ভাত ফোটাতে ফোটাতে হাতের রেখা মসৃণ ক’রে ফেলেছে।
৬
সমস্ত মিথ্যে প্রতিশ্রুতি এক-একটা সৎ স্বপ্ন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবছিলাম। বাবা-মায়েরা খালি বলে - আরে, আমরা আছি তো। আয়না থেকে বেরিয়ে একজন বলল - সৎ প্রতিশ্রুতির কাছে কত স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে যায়।
৭
কিছু প্রশ্নের উত্তর, সেই প্রশ্নেরই প্রতিধ্বনির মতো… গাছ থেকে ফুল তুলে মেয়েটি খোঁপায় দিয়ে জিজ্ঞেস করল - ‘কেমন লাগছে?’ সবাই বলল - ‘দারুণ’ … গাছ বলল - ‘খুব’।
৮
গীটার বাজাতে বাজাতে সঠিক সুরের খোঁজে আঙুলের সুকতলা যেমন শক্ত হয়ে যায়, আমাদের হয়ে ওঠার কোনও ভেতরে আছে পাঁজরের পাথর হয়ে ওঠা... পাথরের ধারণায় আছে দেউল... অভাব পবিত্র হলে বিড়িকেও ধূপ ভাবা যায়।
৯
পাথর একটা ছোয়াঁচে রোগের নাম। গঙ্গার পাড়ে বহুজন কে দেখেছি পাথর দিয়ে বাঁধানো সিঁড়ির ওপর পাথর হয়ে ব'সে আছে... ঢেউয়ের দিকে চোখ চেয়ে আছে স্থির... কারও কাজল ঘেঁটে গেছে, কারও হাত থেকে হড়কে গেছে মদের বোতল... নোনা জলে শ্যাওলা হয় না, কিন্তু বিজ্ঞান বইতে এইসব পাথরের উল্লেখ নেই....
১০
মৃত্যুর রিহার্সালে ব’সে থাকে একটি গভীর ঘুম। অন্ধকার থেকে কাদের আবছা মুখ দেখা যায়। ফুটপাত-জ্যোতিষী বললেন - ‘ অপঘাতে মৃত্যু! সাওধান!’ রাস্তায় চোখ চলে গেল। ট্রামলাইনে উবু হয়ে বীজ-দানা খুঁটে খাচ্ছে পাখি। জীবনানন্দের হস্তরেখায় ভ’রে আছে চঞ্চুর দাগ।
১১
রজনীগন্ধা ফুলের মতন একটা দ্বিধাময় জীবন, শরীরের ভেতর ঢুকে পড়েছে... তাকে তোলার সময় ফুল জানতে পারেনি সে বাসরঘরে হাসির ফোয়ারায় গা ভাসিয়ে দেবে নাকি খই-এর উড়ে যাওয়ার সাথে ফুরিয়ে যাবে ক্রমশ চিতার দিকে... ঘুম থেকে নিজেকে তোলবার সময় সেরকম ধুন্দুলি জাগে আজকাল... দোকানদার বললেন - ‘গায়ে পারফিউম লাগিয়ে সেন্ট কিনতে আসবেন না দাদা!’
মন্তব্যসমূহ