দীপঙ্কর দেবনাথের কবিতাগুচ্ছ | আঙ্গিক অনলাইন
জারুলবনের কবি/ দীপঙ্কর দেবনাথ
১)
তুমি একটা শামুকের খোল, তোমার ভেতর বীজধান লুকিয়ে আছে;
আমাকে ঢুকতে দাও ভেতরে
অন্ধকারের খুনে প্রকৃতিরও হাত থাকে
আমি সেইসব পাঠাগারে দীর্ঘদিন জেলবন্দি ছিলাম
যেখানে উইঢিপি গড়ে উঠেছিল পলেস্তারা খসে
একুরিয়ামের রঙিন মাছ জন্ম নিচ্ছে পৃথিবীতে
ঘাসপোকাদের মাংসের স্বাদ নিতে দাও।
২)
যে কবি দীর্ঘ কবিতা লিখতে পারে তার সম্পর্ক দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
অব্যশ্যই তাঁর ভাষা স্বতঃস্ফূর্ত হতে হবে আর রহস্যও রাখতে হবে যাতে ভেঙে ভেঙে পড়তে সময় লাগে
মাতৃভাষায় কবিতা লেখা কবিদের বুকের জল ঘন নীল;
ওপর থেকে দেখলে বিছানো শাড়ির মতো মনে হবে
অবশ্যই ঝুঁকে দেখবার সময় শূন্যে একটা হাত ভাসিয়ে রাখতে হবে।
৩)
আমার মৃত্যু হয়নি অভিঘাতে
ছড়ানো ভালোবাসা: জোনাকি ধরার ক্ষেতে
কতদূর উঠেছে টিপ চাঁদ নেমেছে ছাদে
আমি ততদূর স্বাধীন- নদীও ছেড়ে গেছে দ্বীপ
একটা ভালো ছাত্র উঠলে ক্লাসে
প্রফেসরেরা ভাঙতে শুরু করে নালন্দা;
বান্ধবীর কাজলে লুকোতে গিয়ে
দেখেছি কত অভিশাপ, এক চোখ অন্য চোখ;
আমাদের ঘরবাড়ি সময় ও শূন্যতায় ভরা
ডুবে থাক জলে।
৪)
তোমাকে ছুঁয়ে দেখার মুহূর্তে জোনাকিরা শান্ত হয়ে লুকিয়ে থাকে গাছে গাছে আড়ালে
খসখসে গাছেদের ছাল বেয়ে টপটপ জল পড়ে
খরস্রোতা নদীর বুকে চাঁদের আলো একটা দৃশ্যও সম্পূর্ণ করতে পারে না
তোমাকে ছুঁয়ে দেখার মুহূর্তে আকাশ তারাভরা ছায়াপথে বিবাগী পাখিদের ডেকে নিয়ে যায়
দূরের হিমালয়ে ধূম লেগেছে;
আমাদের মৌন মিলন আঁধারে ঢেকে যাওয়ার আগে
দুজনার চোখে শেষবার জারুলবনের মতো জ্বলে বিষাদবনের তীব্র টানে মিলিয়ে যাই
আমাদের যৌবন বেঁচে আছে অন্য কোনো গ্রহে।
মন্তব্যসমূহ