পঙ্কজ চক্রবর্তীর গুচ্ছ কবিতা | আঙ্গিক


জলের অক্ষরে

চিরস্থায়ী কাঁসার বাসন তোমাকে দেখিনি কতদিন। কোন তোরঙ্গে আছ অবিবাহিত সন্তানের অপেক্ষায়? এসো লুব্ধ, অন্ধকারভেদী, মানুষের ঘন শ্বাসে বাদামীবরণ। আজ আমার ভাতের থালা আশ্চর্য সুন্দর। তুমি শুধু গুপ্ত সমিতির কনিষ্ঠ সদস্য। মাঝে মাঝে উঠে আসে গভীর জলের মাছ। দুই সতীনের দিঘির তলদেশে জলের অক্ষরে জন্ম জন্মান্তর।

এইসব সনাতন মানুষ, দৈবি আসন এসব পেরিয়ে নিয়ন আলোয় প্রতিবিম্বের হাতে উঠে আসে অচেনা অক্ষর। তোমাকে দেখিনি শুধু ব্যজস্তুতি ঝরে পড়ে বৃষ্টির দিনে।


শ্মশানছবি

শ্মশানবন্ধুর দলে আমিও ছিলাম। তোমার মৃত মায়ের দিব্যি ডোমের বউয়ের দিকে তাকাই নি একবারও। আমি শুধু দেখেছিলাম কীভাবে হাত খুলে রেখে শুরু হয় গান। কীভাবে হলুদ আলোর পাশে নেচে ওঠে প্রসূতিসদন। দূরে কাঁটাঝোপ। তার গায়ে নদী ভেঙে বেরিয়ে এসেছে ছোটো খাল, মাছের সাম্রাজ্য। মানুষপোড়া ধোঁয়ার পাশে খেতে বসেছে ডোমেদের ছেলেমেয়ে। ঐ তো ভাতের আশ্চর্য মিশে যাচ্ছে তোমার কালো পতাকায়।

শ্মশানবন্ধু আমি, সাদা পাতায় হরিচরণ বিশুদ্ধতায় লিখে রেখো নাম। ডোমের বউয়ের নাভি ফুটে আছে দিকচক্রবালে সেই কথা গোপন কোরো না।


কথামঞ্জরী

সমস্ত কথা, কথামঞ্জরী পেরিয়ে তোমার কাছে যেতে হয় আজ। নদীর ভেতরে মৃতপথ পাঠায় সংকেত। এমনও হতে পারে তুমি নেই, শুধু গৃহস্থ, শান্ত ব্যবহারটুকু অবশিষ্ট আছে। সুতরাং এই পথ পাথরের - অলীক শোকের জলে স্তব্ধ হয়ে আছে। সমস্ত দিন পেরিয়ে, সূর্যাস্তে, সুদূর সবুজের মাথায় আমি টের পাই বুকের দুটি স্তন আশ্চর্য নরম। মৃত জোনাকির রঙে ভেসে যাচ্ছে রাত্রির পথ।

তোমাকে পেরিয়ে এসে এই তো পেলাম, ভোরের প্রথম জ্বর। শান্ত অপেক্ষার মতো মর্মের অসুখ।


নিলাম

মরা বন্দরের পাশে এই ধুলোমাটির দেশে একদিন কথায় কথায় আগুন জ্বলতো। দূর থেকে দেখা যেত বিবাহের শান্ত শোকসভা। বিলুপ্ত তৃতীয় ভাষায় লেখা হত পরীদের গান। কয়েকটি মানুষ বেড়াতে এসে ঊষর যোনিতে রেখে যেত না দেখা সন্তানের অন্ধকার, প্রকৃত নীল মুখ। কাহিনির সুতো ছিড়ে আকাশে উড়েছে কত লাল নীল হলুদ বেলুন!

খুব উঁচু পাহাড় থেকে দেখলে মনে হবে খেলনা পুতুল  আর সবুজ পাখিদের সভা। উড়োজাহাজের নিরক্ষর ছায়ার নিচে এই তবে প্রসন্নময়ীদের গ্রাম!

মন্তব্যসমূহ

রাজদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন…
অনবদ্য লেখা।

জনপ্রিয় লেখা