বিবস্বান দত্ত
নববর্ষ ১৪২৫- ৬
চণ্ডাল কাব্য
ভুল শুধু ভুল ছাড়া অন্য কোনো শব্দের ধুনি জ্বালিয়ে বসিনি এ শব সাধনে এ যেন আত্ম সাধন নিজ মৃত দেহ দেখে হা হা হা হা হাসি পাচ্ছে মেঘ উড়ে যাচ্ছে রাতের
না চাওয়ার বৃত্ত বড়ো হতে হতে হতে হতে যেদিন এই পৃথিবী ঢেকে ফেলেছিলো ডোম সেইদিন বুঝেছিলো অস্তিত্বের জন্যই তাকে থাকতে হবে কেউ চাইবে না তবু অস্পৃশ্য চণ্ডাল ছোঁয়া বাঁচিয়ে রোজ নিজের মৃতদেহ দাহ করছে আর কেউ তাকে চাইছে না তবু অন্য কোনো গ্রহে প্রাণ নেই বলে নিজে শুধু থেকে যেতে হবে বলে এখনো এখনো এখনো
বার বার ভুল শব্দে হাত যাচ্ছে ধুনিতে আগুন বাড়ছে নিজের হাড় মজ্জা চড়চড় করে আগুনে ফাগুনে এক হয়ে লীন
জল ভেবে আর কত পানপাত্র হাতে তুলে নেবে তরল কঠিন বায়বীয় এ পৃথিবীর সমস্ত আগুন শুধু আমার বলে নিজের মৃতদেহের মাথায় করুণায় হাত রাখি ভাবি এ হাত যদি যদি যদি ভুল করেও অন্য কারো হত
অন্যের কথায় মনে পড়লো ভুল করে একবার আমি অন্য এক চণ্ডালের দেহে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম সে হট করে আগুনগুলো ছড়িয়ে দিলো ডালে আর বললো এই পৃথিবীতে সমস্ত আগুনের উত্তরাধিকার কবিদের বলে দাহচিহ্ন কেউ নেবে না বলে কবিদের কেউ চায় না বলে কবিদের শব্দ ছাড়া অন্য কোনো ফুল নেই বলে মিথ্যে কী মিথ্যে শব্দের কাটা মুন্ডু হার গলায় পরিয়ে হেসে চলে যান জল
জলের পাশে শবসাধনা আত্মদহন ভুল শুধু ভুল শব্দ জ্বলে উঠছে ধুনি চণ্ডাল নদীর তীরে বসেও জল ছুঁতে পারে না বলে নিজের ভস্মাবশিষ্ট হাড় জলে ছুড়ে ফেলছে
সেই জল থেকে রোজ যে বাষ্প হয় তা দিয়ে একদিন কবিতার বৃষ্টি হবে সেই বৃষ্টিতে ঠিক
আমার চিতা নিভে যাবে
দেখো
আদিবর্ণ
১
আমাদের আলোকিত জার্নিও থেমে গেছে রাতে যেভাবে চুমু থেমে যায় হঠাৎ ঘরে বন্ধু ঢুকে গেলে মহীনের ঘোড়া ছোটে আদিগন্ত বুকের ভেতর উৎসব কীসের বা শুধুই মৃত্যুসংলাপ
একদা আমি প্রেম করেছি শুয়েছি চাঁদ ডুবেছে অলীক খেমটা নাচ দেখে আইটেম ভালো লাগলে আম আদমি নাচ দেখে থাকে সেসব আলোক নৃত্য ফুলেল কথাকলি অথবা শুধু বুক নাচলে আমরা ঈর্ষা করি মানবতায় গাধাকেও ভালোবেসে ডাকি স্যার আসুন একটু কাফকা পড়িয়ে যান
আমার ছেলে খেতে পায়নি মেয়ে শুয়েছে রোজ রাতে করবীগাছের সাথে আমি শুধু নিশ্চুপ গীতা পড়ছিলাম ঘটকের গানে লিঙ্গ বদ্ধমূল হলে এলোমেলো খুঁটে খাই আঢাকা জীবনের মানে
হাত থেকে বই পড়ে গেলে ঝুঁকে তুলো বুক দেখতে পাবো সুখ দেখতে দেখতে আমরা ডুবে যাচ্ছি ডুবে যাচ্ছি ডুবে যাচ্ছি ঈশ্বর কাশছেন বুকের ভেতর থেকে বসে আর কিছুতেই কফ সিরাপ খেতে চাইছেন না
আমরা যারা গান শিখিনি সুর শিখিনি প্রেম শিখিনি কবিতা শিখিনি আবৃত্তি শিখিনি শব্দ শিখিনি তারা বিশ্বাস করেছিলাম
কাহানি যাঁরা দেখেছেন জানেন বিশ্বাস ঠান্ডা মাথার খুনি তবু গুরু বলে গেছেন মানুষের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা পাপ প্রায়শ্চিত্তে পুনর্বার প্রেমে পড়তে পারো তবুও বিনয় মানসিক হসপিটালে মরে কারণ কবিদের ঘর নদীপারে বলে বন্যায় অরক্ষণীয়
ফিলিপের আলো মরে আলগোছে ঘুমের গভীরে এইভাবে আলোকিত জার্নিও শুয়ে যাবে সুনিবিড় রাতে
২
অতঃপর লজ্জাবস্ত্র খসে পড়ে আলো এই পৃথিবীর সমস্ত গাছ ঋজু ও দৃঢ় বলে দুঃখের মতো শঙ্খিনী কামপরায়ণা ষোলো শৃঙ্গার শেষে কতো শতাব্দী বসে আছে কমলা কোয়া তবু রসস্থ যেমন নিবিড় শাঁখ
এসব জীবন গান ফুলে ওঠা স্বর কত যুগ দোঁহে লিপ্ত অমোঘ আশ্লেষ তবু ক্লান্তি জমে চোখ আর আলোকিত জল ভরে কত রাধিকা স্বেচ্ছাবৃতা নৌকায় ওঠে কপিলার মতো
তবু আমার কেউ নও তুমি শ্যামদাস মালা অক্ষম দিনাতিপাত বিছানায়ও ভালো তবু ঝড়ের মধ্যে নৌকো ডুবে যায় ঘোরে নীবিবন্ধন ছিঁড়ে প্রবিষ্ট উল্কায় আগুন আগুন আগুন
এইভাবে সব ডুবন্ত নৌকা কঙ্কাবতী খেতু এইসব কুবের কপিলা কৃষ্ণ রাধিকা শুধু গাঢ় জল জলে মিশে যায়
এসব গল্প কোনো ফলাকাঙ্ক্ষী নয় আনন্দযজ্ঞে নিভে আসছে রাত একদিন সেই সব রাষ্ট্রহীন প্রতিষ্ঠানহীন দেশ যেখানে সতত স্মরণ শুধু মরে গেছে বলে সতত মরণ সদা জাগ্রত
হে দত্তকুলোদ্ভব কবি যে যাহারে ভালো বাসে সে যাইবে তার পাশে তবু কিসের আশে আনমন আনস্তনে চক্ষু টাটায় আবহমান চাওয়া যেন কতবিধ হয়
সেসব জানোনি তুমি কেউই জানেনি শুধু অপচয়ে বেলা কাটে বিদরে হৃদয় আজ অকস্মাৎ যে এলে রাত্রির দ্বারে যেমন এসেছ তুমি ইসল্ট হয়ে ত্রিস্তানে ভাগনার গীতিকাব্যে লিলি ফুল হয়ে
একুশ শতকে ডাকে বৃদ্ধ কোকিল তার গীতিরবে সংস্কৃতি লেখা হয়ে থাকে
সেসবে পাতছি কান পেতে রাখি দেহ প্রাচীন শ্যাওলা যেন শব ঢেকে দিলো বলে কথাদের প্রিয়তম ঝিনুক কুড়োই যেখানে লুপ্ত আছে মুক্তর দেহ নিত্য যেন শ্বাস পড়ে অপচিত বোধে
প্রাক্তনের ইতিহাস নতুনের স্রোতে এই মাত্র ভেসে এলো তুলে নেবে বলে
৩
সে ছিল শঙ্খিনী নারী স্তন ছোটো স্বভাবত ক্ৰোধী বলে আলোকিত মনে নিত্য করে আসা যাওয়া তবু সংকেত হায় সংকেত কেন বোঝা গেল না
ইতস্তত ফুলগুলো ঝরে আছে পথে মরে আছে অনুভূতি যাকে একদা প্রেম ইত্যাদি হঠাৎ স্মৃতির জলে কলসী ডুবলে শুধু দুই শঙ্খের মাঝের তিল ভেসে ওঠে ধ্রুবতারা যেন অন্ধকার আকাশে আরো গাঢ় অন্ধকার চেয়ে চেয়ে আছে
অন্ধকারের স্বাদ জানি বহুকাল হলো তবু উপবাসী যদ্যপি ইচ্ছেরা সরে আছে ভরে আছে ঘোরে আছে প্রিয়
আমার প্রেমের রং কালো নাকি শ্যামলা বলে নদীরা পথ ছেড়ে দিলো মুহূর্তে তবু মনে থাকে বন্ধ চোখ অন্ধ অন্ধ অন্ধ রাজা শোনে যুদ্ধের বাণী
তার হাতে নির্বাপিত আমি
বহুকাল হলো যেন মেছুয়ার গানে স্বেচ্ছায় হস্তধৃত তবু কবেকার কবেকার কবেকার স্রোত
স্রোতের ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছি কালোর বুকে হাত হাতের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে বিষণ্ন সন্ত্রাস তবু সে আগুনকন্যা তবু সে নেমে আসে ইতিহাস থেকে
শুধু হাত ছিলো ঘন ঘাসে ঢাকা দ্বীপের গভীর থেকে কোনোদিন কোনো নদী পথ পায়নি ওখানে বলে হঠাৎ বন্যা এলো টেনে নিল ঘরে
হাতেই রক্ত লাগে শতাব্দীর যবনিকা ফেটে
৪
স্বপ্নে সঙ্গম হয় ঈষৎ হাত রাখি বুকে আশ্লেষে ঘেমে ওঠে রাতের শরীর তবু মুখ মুখ রাত্রির মুখ যদি দ্যাখা যায় বদলাতে বদলাতে বদলাতে থাকে
কখনো বিষম চেনা চেনা মুখ সারি দিয়ে সারি গান গায় কখনো অচেনা সে মাত্র কয়েকদিন ফেসবুক স্ন্যাপ চ্যাটে ঘুরে যাচ্ছে সবুজ আলো আমরা দূরত্ব ভালোবাসি বলে দূর দূর সুদূর সঙ্গমে বিশ্বাসী
তিলতন্ডুলক আলিঙ্গনে নিভে আসছে রাত ললাটিকা এমন প্রদাহে এসে মেশে আলো আঁধারের পাশে তখন মনে হয় মাল্যবান এসে ব্যর্থতায় খুঁজে নেন সঙ্গমের মানে যখন আলো অন্ধকারে যান স্বপ্ন নয় কোনো এক বোধ কাজ করে
উৎপলা উৎফুল্লক হয়ে অপেক্ষায় বসে আছে নীল নদীতটে মেঘের বালিশ আছে ধীর শুয়ে নিতম্বের নীচে অথচ শাদা শাদা শাদা পাতা এসে মোহময় জ্যোৎস্নায় ডাক দিতে দিতে আয় আয় আয়
ইন্দ্রানিক অবস্থানে কোনো পুরুষ কল্পনা করতে করতে করতে করতে পাখি মানুষ আর উৎপলা ঘুমিয়ে পড়েছিলো টিলার ওপর সেই নিভৃত নিদ্রা আজও ভাঙেনি বলে খাতা খাতা শাদা মৃতদেহ ছাড়া কবির কোনো ওম প্রাপ্য নয় আবহমানে
কবি তো মৃতজীবী শব্দের খোঁজ করে করে মরে গেছে অপেক্ষার সুপ্রাচীন পিলসুজ রাতে বলে গেছে স্বমেহন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এই পৃথিবীতে কবিতা আসবে না
মন্তব্যসমূহ