অভিষেক মুখোপাধ্যায়

অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের পাঁচটি কবিতা





রঁদেভুবিতান

এখনও যে ছায়া পড়ে খাঁজের গোপনে, গাছতলা, নদপার তিনতালে ভণে
ভণিছে গুরুর নাম- পর্দাতে টান; ভাঙল অস্থিশুদ্ধ রঁদেভুবিতান।।

ভেঙ্গেছে শাড়ির মাড়, আঠাআঠা চুল খাঁজকে রহস্য ভাবি ভুলের মাশুল-
গুনতে গুনতে সোনা মুছে গেছে কর আবার আরম্ভ করি প্রাক্ঈশ্বর-
শ্রোণিতে বরণডালা, পাতাময় হাঁটে; দুগ্ধসিন্ধু জমে মায়াপার ঘাটে
না হয় প্রেমিকা হলে রতিসতীসুখ- উপবৃত্তের খাঁজে হারাবো চিবুক।।

শব্দশপথ এবে, টেনে ধরি গলা টানছি টানছি যতি, করালী বগলা-
সকলি মদের জ্বালা, মাথা ঘুরে যায়; জবাফুল রেখেছিল খামের বাঁ পা
কবিতা চিয়ার্স হোক তখন শরীরে- খাঁজ বেঁয়ে তরতর ছায়ামাঘ ঘোরে
মাঘটি প্রেমিকা হবে, ছায়াটি প্রেমিকা; দুগ্ধে ধুইয়ে দেবে চাকা দাগ টিকা
যে চাকা চুমুর কাছে্কামড়ের কাছে- ছেঁড়া পাঞ্জাবী পড়ে কোনোমতে বাঁচে
সে চাকা ধ্রুবক চাকা কামড়াবে রোজ কথা দাও তুমি হবে কন্দর্পভোজ।।

অথচ সে হাঁটুমুড়ে হাতের আড়ালে, খাঁজটিকে ঢেকে দেয় কাশ্মীরী শালে

ঢেকেছে গুরুর নাম- বল্কলে টান; ছিঁড়ল নিষেধআয়ু, রঁদেভুবিতান।।



অশৌচ, অশৌচ


মা, নিষাদ তোমার জলের সঙ্গে গুলে                      গেরুয়ামাটি-পৈতেবাঁধা চাবি
চামচ ভেবে ঘুরিয়েছি চারপাক
সুলভ শৌচালয়ে ব্যস্ত ছিলে প্রায়                           অদম্য ফল, রেচন যাকে ভাবি
গোলাপী ভ্রূণ মেথর দরজায়-
থেকে কঁকিয়ে ওঠে নিষাদ নামের আয়ু                    তার লেপকম্বল-মলমুত্র বমন
আয় ধ্বংস করি হেঁতালিয়ার ঝি
তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ভালোবাসায় বেঁধে                                নিতাইব্রত শেখায় সারামাস-
আদুরগায়ে বেণীমাধব শীল
মা, আদুর মানে ক্রৌঞ্চমিথুন বধ                          ফর্সা শরীর কেবলই শাশ্বত
চাটাইপাতা অমসৃণ মেঝে
তাতে ছড়িয়ে দেবো যিশুর কফিনকাঠ                    ব্যাধকে জানাও দলীয় স্বাগত
প্রথমভাগ বর্ণপরিচয়-
দেখো লুটিয়ে পড়ি চিরকালীন ঘুমে                                নিষাদ তোমার রাতের মায়াবোধ
বাবার মতন দেখতে তাকে জানো?
আমি জলের সঙ্গে গেরুয়ামাটি গুলি                      গুলি পৈতে-চাবি, আইপিল্‌, নিরোধ
হা মরণ, তোর এখনই হতে হল?


ক্যারেনিনা, মৃত্যুগুলি এখানে মিথ

গ্রামে সন্ধ্যায়, ম্যাপেল ঝোপগুলি, বরফে চাপা পড়ে রুদালী গায়
আলাপে ধানসুর- রেলিং- ঝুঁকে আছে গোলাপি উলকোট, ফারের হ্যাট
বাঁদিকে রেলপথে কবি তামাতার, হাপরে চাঁদ নামে, চাঁদকে খায়
সে তারে প্রাণ রাখো মরা জ্যোৎস্নায়- শুভ্র জানুতলে রেখোনা হাত

আদিম ত্রয়োদশী, মাইল-মদ-মসী, অথচ হাসি নেই তার মুখে
হ্লাদিনী শ্লোকগাঁথা, ব্রণ মত তবে পাথরে লিখে চলি আমৃত্যু
যদি বা কবিতায় খুনের কথা থাকে, চাঁদকে দোষ দেবে- শপথ নাও
শব্দগুলি জানে, এখানে-এইখানে দেবতা হয়ে যাবে সে হত্যা
                  
বিবশ শুয়ে থাকো, অসুখে ধুয়ে দাও গ্রাম-প্রান্তর, ম্যাপেল গাছ
সুখে যে যন্ত্রণা, মরেও পারবেনা সইতে তার বিষ-তরলধক্
সাপের মত বিষ, কবির মত বিষ, সে বিষ কামড়ায় লাল রিবন
আলাদা হয়ে গেলে, যেভাবে পুনরায় ঋতুর দিকে ফিরে উইপোকা

শৈত্যসঙ্গমে, মিলন শেষ হলে, তুলেছে আলিসান বিষাদস্তূপ-
ঈশানে তার দিকে রেখেছ জরায়ু-এখন সন্ধ্যায় তুষারপাত
ম্যাপেল নাভিগুলি রেখেছ ছাইপাঁশে, তোমার নেশাজ্বর একশো এক
শরীরে উইঢিবি- ভেঙোনা রুশিবিবি, প্রেমে ভদকায় শান্ত হও


ভাদ্রবৈষ্ণব

মালিনী, তোমার অক্ষরগুলি আমাকে দিওনা ভরা ভাদরে
দাও ঈশ্বর, পাথরখণ্ড- ঘৃণারূপে দাও গন্ধপুষ্প
মালিনী, তোমার অকালীকরালে নির্বীজ হয় রাঙের মাংস

প্লাস্টিকরসে সেরে ওঠে ক্ষত, চপারে মালিনী-ঠাস্ছিল খুব

নারীজ শব্দ, খারিজ শব্দ- শব্দ, শীতল মধ্যরাতে
মালিনী, তোমাকে আগুন দিয়েছে, বোতাম দিয়েছে হাজার ঘরের
সন্ধ্যাঊরুতে চাঁদ এসে পড়ে, ইলোরা রঙের অক্ষরগুলি

চাদরের ভাঁজে জ্বরপোকা হয়ে হেঁটে যায় শবপাতার দিকে

পাতাগুলি পুড়ে কালো হয়ে গেল, মালিনী, তোমার প্রিয় কালো তাপ
হাত সেঁকে নাও, ভাত সেঁকে নাও, থালায় রেখেছো নাভি নী-কার
বৃষ্টিরা যেন মৃত্যুবিকার- ছাই পান করে আগ্রাসী ঝড়


যশোরনাট্যম

মায়া অচেতনে, প্রগাঢ় প্রেম ঘুমে, শব্দে রাখি মুখ-বিচুম্বন
মোহ কি কোনও স্বর- অস্বরা রাত্রির, মোহন পাপগুলি ঝরে পড়ে
বিল্ব নিঃশেষ, বিল্ব নিঃশেষ’- আদিম উল্লাস করছে শিব
ভ্রষ্ট করও প্রান, লজ্জা-ঘৃণা-ঘ্রাণ, আমাকে সাপ দাও-নীল শরীর

একশো উঁচু ফণা, ছোবলে যন্ত্রণা, হিংস্র তার খিদে, কামড় দাও
আহা কি সুখ শ্রেয়া, তোমার অশ্রেয়া আমাকে নিয়ে যায় অরন্যে
রাত্রি হলে দেহে, জোছ্নামুখ স্নেহে, ইভের মত ঠোঁটে শব্দকে
বুলেট ছুড়ে মারো, রাষ্ট্র ছুড়ে মারো, সন্ত সন্তাপে হিন্দু হও

পদ্মমণি থেকে, সে এক মহারাগে, জন্ম নিল মেঘ, বৃষ্টিরা
উইন্ডস্ক্রিনে লাগা গাছের আত্মায়, ঝুলছে দুটো মুখ একসাথে
ঝগড়াঝাঁটি নেই রুহির টেক্কায়, শান্ত শিরাগুলি নেশার ট্রাম্প
মায়া অচেতনে, স্বর্গ উদ্যানে, শ্রেয়া শিব নাচো শ্রাবণনাচ

মালিনী, তোমার অক্ষরগুলি মেঘ হয়ে যাক- ভরা ভাদরে

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা